বিশেষ বিবেচনায় বেগম জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল সরকার। দেশে মহামারী চলাকালীন সময়ে তাকে পাঠানো হয় তার গুলশানের বাড়িতে।সেই থেকেই বেগম জিয়া রয়েছেন সেখানে। এ দিকে বেশ কিছু দিন পর গতকাল জানা গেলো নতুন এক খবর। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার রাতে বিএনপি নেতাদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালায় পুলিশ। রাজধানীর মতিঝিল, নয়াপল্টন, গুলশান, উত্তরা, নর্দা, কোকাকোলা, কালাচাঁদপুর, শাহজাদপুর, উত্তর বাড্ডা, তেজগাঁও, উত্তরখান, দক্ষিণখানসহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ অভিযান চালায় পুলিশ। রামপুরা এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট ও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পৃথক ঘটনায় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুসহ অন্তত আটজনকে আটক করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে ড. শনিবার রাতে হঠাৎ করে গুলশানের ‘ফিরোজা’ ভাড়া বাসার সামনে সড়কের দুই পাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ওই সড়কের দুই পাশে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। অতিরিক্ত চেকপোস্ট ও পুলিশ মোতায়েনের কথা স্বীকার করেছে ডিউটিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা। তবে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী সন্দেহভাজন এলাকায় আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বাড়ির নিরাপত্তার জন্য ইতিমধ্যেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নতুন কোনো পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার ফারুক আহমেদ বলেন, সম্প্রতি জঙ্গি ছিনতাই, ত্রয়োদশ রাত ও মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে দাবি করেছে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা অভিযোগ করেছেন, একটি পক্ষ গুজব রটিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। নয়াপল্টনের জনসভায় যোগ দিতে পারেন খালেদা জিয়া। তারা বলেছেন, সমাবেশে খালেদা জিয়ার যোগদানের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ধরনের কোনো দলীয় সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা তারা নেয়নি। এছাড়া খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। শর্তসাপেক্ষে জামিনে থাকলেও তিনি এখনো মুক্ত নন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি জাবেদ হাসান স্বাধীন ও টুকুর ব্যক্তিগত সহকারী মোকলেছুর রহমানকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমিন বাজার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রাজশাহীর গণসমাবেশ থেকে ফেরার পথে তাদের গাড়ি থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ তাদের আটক করে। বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, টুকুকে দারুসসালাম থানায় নেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে টুকুর স্ত্রী সায়মা পারভীন সিমি থানার সামনে অবস্থান নেন। তিনি জানান, তার স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ। আমি তাকে নিয়মিত যে ওষুধ খায় তা পাঠাতে পারি না। কারণ পুলিশ আমাদের কাউকেই তার সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কেউ আহত হয়নি। ককটেল বিস্ফোরণের পরপরই পুলিশ অন্তত চার বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করে। বিএনপি কার্যালয়ের পাশের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, চলন্ত গাড়ি থেকে ককটেলটি ছোঁড়া হতে পারে।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়া জানান, সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির একটি দল ককটেল ফাটিয়েছে। বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া বেলা ১২টা ৫৫ মিনিটে যুগান্তরকে বলেন, কাকলী এলাকার ঢাকা মেস, হোটেল পূরবী আবাসিক, হোটেল ইনসাফ আবাসিক ও হোটেল নর্থ সিটিতে অভিযান চালানো হয়। তবে কাউকে আটক বা আটক করা হয়নি। তিনি বলেন, বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে আমরা এ অভিযান পরিচালনা করেছি। গুলশান থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বেলা ১টায় বলেন, পুলিশের নিয়মিত টহল ডিউটি চলছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গুলশান থানা পুলিশ সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে, গুলশানে যেসব স্থানে বিএনপি নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। নরদা, কোকাকোলা, কালাচাঁদপুর, শাহজাদপুর, উত্তর বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় পুলিশী চেকপোস্ট ও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
এ দিকে এ নিয়ে শুরু হয়েছে বেশ আলোচনা।এ নিয়ে পুলিশ জানিয়েছে ১ ডিসেম্বর থেকে চলা ১৫ দিনের বিশেষ অভিযানের অংশ হিসাবে জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও ‘মা’দ’ক’ ব্যবসায়ীদের গ্রে’ফ’তা’রে’র ‘লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে রেইড চলছে। তবে বিশেষ অভিযানে কাউকে গ্রেফতারের তথ্য পুলিশ জানাতে পারেনি।