Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / হজে গিয়ে ভিক্ষা করা সেই বৃদ্ধার সকল কুকৃত্বির ইতিহাস প্রকাশ করলেন তার স্ত্রী

হজে গিয়ে ভিক্ষা করা সেই বৃদ্ধার সকল কুকৃত্বির ইতিহাস প্রকাশ করলেন তার স্ত্রী

সম্প্রতি এক বৃদ্ধাকে হজে গিয়ে ভিক্ষা করার অপরাধে আটক করেছে সৌদি পুলিশ। তিনি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। ঘটনা সুত্রে জানা যায়, তিনি হজ করার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যান তবে সেটা একবার নয়। তিনি এর আগেও বহুবার সৌদি আরব গিয়েছেন হজ পালনের উদ্দেশ্যে। গ্রামের মানুষের প্রশ্ন, বারবার হজে যাচ্ছেন এবং হজ করার পরেই কেন তিনি এত অর্থশালী হয়ে উঠছেন। আসলে এটাকি আল্লাহর কুদরত নাকি অন্য কিছু। তবে ধরা পড়ার পরে বেরিয়ে আসলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেল হজে গিয়ে তিনি ভিক্ষা করতেন। এরপর, একের পর এক তার বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসতে থাকে ভিন্ন ভিন্ন সব তথ্য।

ছিলেন ডাকাত সর্দার। ডাকাতিতে ধরা পড়লে গণপিটুনির শিকার হন। ওই সময় দুই হাতের আঙুল ভেঙে দেওয়া হয়। সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হলে দুই হাতের কবজি কেটে ফেলেন চিকিৎসক। পরে পেশা বদলে হয়ে যান ভিক্ষুক। ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তান ও সৌদি আরব গিয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন। বিশেষ করে প্রতিবছর হজের মৌসুমে সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। গত ১৫ বছর ভিক্ষা করে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। ভিক্ষার টাকায় নিজ গ্রামে কিনেছেন জমি। বর্তমানে ২০ বিঘা কৃষিজমির মালিক।

বলছিলাম মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মতিয়ার রহমানের কথা। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। হজে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় এবার সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। গাংনী উপজেলার সিন্দুরকোটা গ্রামের ভাটপাড়ার বাসিন্দা মতিয়ার রহমানকে গ্রামের সবাই ‘মন্টু ডাকাত’ বলে চেনেন। কারণ একসময় ডাকাত দলের সর্দার ছিলেন। গণপিটুনির শিকার হয়ে হাতের কবজি হারানোর পর এলাকা ছেড়ে বিদেশে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেন।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কম খরচে ভারত হয়ে হজে যাওয়া সহজ হওয়ায় প্রতিবছর হজে যান মতিয়ার। এ পর্যন্ত ১২-১৩ বার হজে গেছেন। প্রতিবছর ভিক্ষা করে দেশে ফিরে জমি কেনেন। মূলত হজ করতে নয়, ভিক্ষা করতেই যান। করোনার কারণে এবং সীমান্ত বন্ধ থাকায় গত দুই বছর হজে যাননি। এবার ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিস (হজ লাইসেন্স নং-৭৩৭) এজেন্সির মাধ্যমে হজে গিয়েছিলেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২২ জুন সৌদি স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে মদিনায় ভিক্ষা করতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। পরবর্তী সময়ে তাকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনে সৌদিস্থ বাংলাদেশ হজ মিশন। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় এ ঘটনায় ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ‘কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না’ তার জবাব দিতে নোটিশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সিন্দুরকোটা গ্রামের আফজল হোসেন, হারুন অর রশিদ, জামাল মিয়া ও জাকির হোসেনসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, ডাকাতিতে ধরা পড়ে দুই হাতের কবজি হারানোর পর ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। ‘মন্টু ডাকাত’ বলে ডাকলেও গ্রামের মানুষ এতদিন তাকে সহজ-সরল মনে করতেন। তবে গ্রামে ভিক্ষা করতেন না। হজের মৌসুমে প্রতিবছর সৌদি আরবে চলে যান। হজের মৌসুম শেষ হলে বেশিরভাগ সময় ভারতে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে খুব কম সময় থাকেন। এবার ধরা না পড়লে গ্রামের লোক জানতেন না তিনি ভিক্ষা করেন।

পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, ভারত-পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের লোকজনকে সংঘবদ্ধ করে সৌদিতে ভিক্ষা করেন মতিয়ার। হজের মৌসুম শেষ হলে দেশে ফিরে আসেন। তবে বেশিদিন গ্রামের বাড়িতে থাকেন না। বিভিন্ন স্থান, বিশেষ করে ভারতে বেশিরভাগ সময় কাটে তার।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি হজের অজুহাতে প্রতিবছর সৌদি গিয়ে ভিক্ষা করেন মতিয়ার। ভিক্ষা করে গ্রামের বাড়িতে কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। আগে ডাকাত দলের সর্দার ছিলেন। ডাকাতি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়লে গণপিটুনি দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয়। পরে চিকিৎসা করিয়ে হাত কেটে ফেলেন। এলাকার মানুষ এখনও ডাকাত বলেই চেনেন। তবে সহজ-সরলের ভান করে চলতেন।’

ওই এলাকার ইউপি সদস্য (মেম্বার) ফারুক হোসেন বলেন, ‘মানুষ হজ থেকে ফিরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তাকে কোনোদিন গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে দেখিনি। গ্রামে বলে বেড়াতো বিভিন্ন এজেন্সি তাকে হজে নিয়ে যায়। হজ থেকে দেশে ফিরে প্রতিবছর জমি কেনেন। এবার পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর জানলাম হজে গিয়ে ভিক্ষা করেন। আসলে মতিয়ার প্রতারক।’

মতিয়ার রহমানের স্ত্রী এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‌‘স্বামী হজে গিয়ে কি করে আমি বলতে পারবো না। তবে হজে গিয়ে এ পর্যন্ত ১০ বিঘা জমি কিনেছেন। কোথায় টাকা পেয়েছেন, তা আমি জানি না। রবিবার শুনেছি তাকে গ্রেফতার করেছে সৌদি পুলিশ। এবার বাড়ি ফিরলে বাধা দেবো, যাতে আর হজে না যায়। তিন মেয়ে এক ছেলে আমাদের। সন্তানদের বিয়ে দিতে হবে, এলাকার মানুষজন খারাপ কথা বলতেছে। তার এমন কাজ করা ঠিক হয়নি। মেহেরপুর জেলা হাজি সমিতির সভাপতি গোলাম রসুল এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এটা বাংলাদেশি হাজিদের জন্য লজ্জার। বিষয়টি হাজি সমিতি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানাবো আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর হাজিদের হজে পাঠানোর দাবি জানাই। হজে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি আমরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পর তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষার জন্য মানুষ কত কিনা করে। প্রতিটি মানুষেরই একবার করে হজ করা ফরজ। তবে তার বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। যে ব্যক্তি একবার হজ করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারল সে আসলেই পৃথিবীর সবথেকে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। আর যে এই সুযোগ পেয়েও হারায় তার মত কপাল পোড়া আর কেউ নয় । আর যে ব্যক্তি হজকে ব্যবসায় পরিণত করে তার মতও কপাল পোড়াও কেউ নয়।

About Nasimul Islam

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *