বাল্যকালে বা জন্মের সময় বাবা-মাকে হারানোর কষ্ট মনে পৃথিবীতে আর নেই। বাবা্মা ছাড়া সন্তানের জীবন নরকে পরিণত হয়। বাবা্মা হারা সন্তানদের জীবনে দুঃখের কোনো সীমা থাকেনা। সম্প্রতি এক সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত এক গর্ভবতী মায়ের পেট থেকে বেড়িয়ে আসলো সন্তান। এমন দুঃখজনক ঘটনা কখনই মেনে নেবার মত না।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মায়ের পেট ফেটে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তার পরিবারকে এককালীন ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গঠিত কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানকে ১৫ দিনের মধ্যে শিশুর অভিভাবককে টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) জাকির হোসেন ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে সোমবার (১৮ জুলাই) শিশুটির বাবা-মা ও বোনকে প্রাণনাশের তদন্ত চেয়ে রিট করা হয়। আইনজীবী কানিজ ফাতেমার পক্ষে ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহাসিব হোসেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন। রিটে দুর্ঘটনার তদন্ত এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা করা যেতে পারে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শিশুর প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও কল্যাণ নিশ্চিত করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
গত ১৬ জুলাই বিকেলে জাহাঙ্গীর আলম তার গর্ভবতী স্ত্রী রত্না বেগম ও মেয়ে সানজিদাকে নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে ত্রিশালে আসেন। চিকিৎসককে দেখার পর পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তারা। এতে জাহাঙ্গীর আলম, স্ত্রী রত্না ও মেয়ে সানজিদা প্রয়াত হন। এ সময় ট্রাকের চাপায় রত্না বেগমের পেট ফেটে অলৌকিকভাবে কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।
পরে আহত শিশু সানজিদা ও নবজাতককে উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সানজিদাকে প্রয়াত ঘোষণা করেন। নবজাতককে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (এমএমইসি) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে শিশুটি জন্ডিসে ভুগছে। এ কারণে তাকে বেসরকারি লাবিব হাসপাতাল থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার সেন্টারে (এনআইসিইউ) নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, পরিবহণ চালকরা এতটাই বেপরোয়াভাবে গারত চালায় যা কল্পনারই বাইরে। উন্মত্ত হয়ে গাড়ি চালানোর ফলে কেড়ে নেই অনেক নিষ্পাপ প্রাণ। যেমনটি নিয়েছে এই ছোটো নবজাতক বাচ্চাটির। ভাঘয়ের কি কঠিন পরিহাস জন্মের সময়ই হারাতে হলো বাবা-মাকে।