সিলেটের সড়ক ও গণসড়ক অধিদফতরের (সওজ) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সড়ক সংস্কারের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। একজন ঠিকাদার কাজ না করেই বিল তুলেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। তিনি অভিযোগ করেন, সাওয়াজ সিলেটের কর্মকর্তারা সংস্কারের নামে বরাবরের মতো ডাকাতি করেছে।
তদন্তে এমপির অভিযোগের সত্যতাও দৃশ্যমান। সম্প্রতি সওজের বিভিন্ন সড়কে অনিয়মের চিত্র ধরা পড়ে। যেন সরকারের এই দপ্তরের কর্মকর্তাদের ও ঠিকাদারের মিলেমিশে অর্থ লোপাট।
সিলেট সওজের আওতাধীন রশিদপুর-বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়কের ১১ থেকে ১২ কিলোমিটার এবং ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার অংশে জরুরি সড়ক মেরামতের কাজে অনিয়ম ধরা পড়েছে। এসব সড়কের কাজ না করেই আগে বিল উত্তোলন করা হয়।
সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কার না করে সওজের কর্মকর্তারা অর্থ অপচয় করেছেন। তারা সংস্কারের নামে আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে তামাশা করেছে। ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সড়কটি সংস্কারের কথা থাকলেও এক লাখ টাকাও ব্যয় হয়নি।
গত ১৩ জুন ঠিকাদার রাস্তা মেরামতের জন্য আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয়। যার আইডি নম্বর ৮৩৫৪৩৯ এবং আনুমানিক মূল্য ২১ লাখ ২৮ হাজার ৩৯৬ টাকা।
কার্যাদেশে বলা হয়েছে, বন্যা কবলিত চারটি এলাকায় আনুমানিক দেড় লাখ ১ নম্বর ইট দিয়ে দুই স্তরে ইট সলিং করার কথা। যার মধ্যে একটি ফ্ল্যাট সোলিং এবং অন্যটি এইচবিবি সোলিং দিয়ে সংস্কার করা হবে। কাজের বিভাগ হল পর্যায়ক্রমিক রক্ষণাবেক্ষণ প্রোগ্রাম (PMP)। যার মানে কাজটি কার্যকর করার পর এক বছরের জন্য সম্পূর্ণরূপে দৃশ্যমান হতে হবে।
তবে দেখা গেছে সড়কের কোনো কাজ হয়নি। আগের মতোই ভাঙা ও গর্ত । ঠিকাদার যে শর্তে কাজ হাতে নিয়েছে তার বাস্তবায়নের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তদারকির দায়িত্বে থাকা সওজা কর্তৃপক্ষও কোনো উদ্বেগ দেখায়নি।
কিন্তু সওজ সিলেট ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ দেখিয়ে গত ২২ জুন বিল উত্তোলন করে এবং যথারীতি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে সমাপ্তির সনদ দিয়েছে বলে জানা গেছে।
অর্থাৎ পুরো অর্থ ঠিকাদার ও সওজ কর্তৃপক্ষ মিলে ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
তদন্তে এর সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে।
দেখা গেছে, কার্যাদেশের ৯ দিন শেষে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান চূড়ান্ত বিল ও কাজ সমাপ্তির সনদ দিয়েছেন । বাস্তবে এখন পর্যন্ত সড়ক সংস্কার কাজের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
সম্প্রতি সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে সংস্কার কাজ না করিয়ে ৬ কোটি ১২ লাখ টাকা লোপাটের বিষয়টি বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। একই রকম দুর্নীতি ও সরকারি টাকা আত্মসাতের চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে রশিদপুর-বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজি সড়ক সংস্কারে।
সরজমিনে দেখা যায়, খানাখন্দে ভরপুর সড়কের কয়েকটি স্থানের গর্তে এলোপাতাড়ি কিছু সংখ্যক ইট ফেলা হয়েছে। সম্প্রতি কে বা কারা কয়েকটি গর্তে কিছু ইট ফেলে গেছে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এলাকার লোকজন জানান, অপরিকল্পিতভাবে ইট ফেলার কারণে খানাখন্দে ভরপুর সড়কটিতে জনদুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
স্থানীয় বিশ্বনাথ উপজেলার নরশিংপুর গ্রামের আওলাদ হোসেন ও শামীম আহমদ বলেন, এই রাস্তার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাস্তা দিয়ে লোকজন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চায়ের দাওয়াত দিয়ে দেখা করতে বলেন। কাজ না করে কীভাবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বিল ও সমাপ্তি সনদ ইস্যু করলেন সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের মালিক আবেদ মনসুরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিক নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিশ্বনাথ সড়কের উপ-বিভাগীয় উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান দাবি করেন, সড়কটিতে হেয়ারিং বন্ড ব্রিকসের কাজ হয়েছে। তিনি কাজ না করে বিল উত্তোলনের বিষয়ে বলেন, আমরা কিছু কাজ করেছি। আরও কিছু কাজ বিল উত্তোলনের পর করেছি।
সড়কের দায়িত্বে থাকা সওজ সিলেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল কবির দাবি করেন, সংস্কারের নামে অর্থ আত্মসাৎ সঠিক নয়।তিনি বলেন, জুনে সড়কটি নির্ধারিত চারটি এলাকার বদলে পুরোটিতে কাজ করিয়েছি।
তবে ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান সড়ক সংস্কার না করে বিল উত্থাপনের জন্য পরোক্ষভাবে বর্তমান এমপিকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য এসব কাজের তদারকি করেন না। তিনি সঠিকভাবে তদারকি করলে সড়কে এমন অনিয়ম হতো না। তিনি শুধুমাত্র রাস্তার উদ্বোধনের নামফলক লাগিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজ ও প্রতারকদের প্রতিহত করেছেন। আমার নির্বাচনী এলাকার এই সড়ক সংস্কারে অনিয়মের তদন্ত হওয়া দরকার। সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার হয় সেজন্য মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা প্রয়োজন।
কাজ না করায় কর্মকর্তারা টাকা মেরেছেন বলে দাবি করেছেন বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান।
তিনি বলেন, সড়কটি সওজের হলেও কয়েক কিলোমিটার ইট ফেলে মেরামত করেছি। আর টাকা খেয়েছে সওজ। ওই সড়কে কাদিপুর পর্যন্ত পৌর এলাকায় পড়েছে। সওজ কাজ না করার কারণে ভিকটিমরা আমার কাছে আসে। আমি পৌর এলাকার মধ্যে রাস্তার কাজ করেছি।