‘স্যার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন, না হলে বেইনসাফ হবে’

প্রতিদিন শত শত প্রবাসী তাদের দুঃখ-কষ্ট এবং নানা ধরনের অভিযোগ জানিয়ে বার্তা পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি জানান, এসব অভিযোগ তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন।

মঙ্গলবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বিষয়টি উল্লেখ করেন। সেই পোস্টের কমেন্টে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে মেনশন করে লিখেছেন, “Dr. Asif Nazrul স্যার, এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি চরম অন্যায় করা হবে।”

ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, প্রতিদিন শত শত রেমিট্যান্স যোদ্ধা তাদের নানা সমস্যার কথা জানিয়ে বার্তা পাঠান। বিশেষ করে প্রবাসীদের বিভিন্ন ভোগান্তির বিষয়গুলো বারবার উঠে আসছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে টিকিট সিন্ডিকেট, ফ্লাইট সংকট, ম্যানপাওয়ার ভিসা জটিলতা, অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা ধরনের প্রতারণা।

তিনি জানান, বর্তমানে সৌদি রুটে গ্রুপ টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। যেখানে আগে টিকিটের দাম ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ছিল, এখন সিন্ডিকেটের কারণে সেটি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া, আগে প্রতি সপ্তাহে ৯৮টি ফ্লাইট পরিচালিত হলেও এখন তা কমিয়ে মাত্র ৪৪টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।

এছাড়া, কিছু এজেন্সি আগাম বিনিয়োগ করে ৪-৫টি এজেন্সির মাধ্যমে গ্রুপ টিকিটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। এ কারণে অনেক প্রবাসী উচ্চমূল্যে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি ফ্লাইটে খালি সিট থাকা সত্ত্বেও ব্ল্যাঙ্ক সিট দেখিয়ে সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে।

ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, এয়ারপোর্টে প্রবাসীদের বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেক যাত্রীকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফ্লাইট মিস করানো হচ্ছে এবং পরে অন্য যাত্রীদের কাছ থেকে ১ থেকে ১.২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ম্যানপাওয়ার ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কথাও তিনি তুলে ধরেন। তিনি অভিযোগ করেন, BMET ম্যানপাওয়ার ভিসা অ্যাটেস্টেড বন্ধ রেখেছে, অথচ সৌদি-বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার জানায়, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

তিনি আরও দাবি করেন, কিছু এজেন্সি ও BMET-এর অসাধু কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে প্রতি ম্যানপাওয়ার ভিসার জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি আদায় করছে, ফলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব সমস্যার সমাধান না হলে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা আরও বড় দুর্ভোগের শিকার হবেন। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”


আয়না ঘর পরিদর্শনে গিয়ে নিজেদের নির্মম অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন ব্রি. জেনারেল আযমী ও সাকা চৌধুরীর ছেলে

রাজধানীর র‍্যাব হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত বিতর্কিত ‘আয়না ঘর’ পরিদর্শনে গিয়ে নিজেদের বন্দি থাকার সময়কার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছেলে হুমায়ুন চৌধুরী।

পরিদর্শনকালে তারা জানান, কিভাবে বিনা বিচারে বছরের পর বছর নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে এবং সেখানে কী ধরনের অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছেন তারা।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আযমী জানান, “আমাকে বিনা কারণে আটক করে দীর্ঘদিন বন্দি রাখা হয়েছিল। এমনকি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগও দেওয়া হয়নি। আমার ওপর চলেছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। দিনের পর দিন অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা হতো, খাবার দেওয়া হতো অতি সীমিত পরিমাণে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাকে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, অথচ আমি সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলাম। আমার অপরাধ ছিল শুধু আমার রাজনৈতিক আদর্শের কারণে।”

সাকা চৌধুরীর ছেলে হুমায়ুন চৌধুরী জানান, “আমার বাবাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরবর্তীতে যে বিচার করা হয়েছিল, তা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। আমার পরিবারকে টার্গেট করা হয়েছিল এবং আমাদের উপর ভয়াবহ মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, “আমার বাবাকে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা জানতাম না, তিনি কোথায় আছেন। এমনকি আদালতে বিচার হওয়ার আগেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরিকল্পনা ছিল। আজ এই আয়নাঘর দেখে বুঝতে পারছি, তখন কী ধরনের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড হয়েছে।”

পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “আমরা এতদিন যা শুনেছি, আজ তা বাস্তবে দেখলাম। এখানে যা ঘটেছে, তা ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়।”

তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের নির্যাতন কেন্দ্র চালানো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি যেন আর কখনো না ঘটে, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গুম কমিশনের প্রতিবেদনে আয়নাঘরের সম্পূর্ণ নথিভুক্তকরণ বাধ্যতামূলক করা হবে এবং এ সংক্রান্ত সকল তথ্য-প্রমাণ সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।

তিনি বলেন, “যারা এই নির্মম নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার হবে। কোনো অন্যায়কারী দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না।”