Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / opinion / স্যাংশন দিয়ে ভীতকর অবস্থা এখন প্রবাসীদের মনে, দেশে থাকা আপনজনদের নিয়ে চিন্তিত সবাই : হাসিনা

স্যাংশন দিয়ে ভীতকর অবস্থা এখন প্রবাসীদের মনে, দেশে থাকা আপনজনদের নিয়ে চিন্তিত সবাই : হাসিনা

আমার মনে হয়, বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা আর বাংলার মাটির টান কতটা প্রবল, তা প্রত্যেক প্রবাসী বাঙালি বোঝে। একটি উন্নত দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি যতই উজ্জ্বল হোক না কেন, নিজের দেশের অগণিত সমস্যার তুলনায় তা প্রায়ই ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কারণ নিজের দেশ নিজের। এই ধারণা শুধু বাঙালিদের মধ্যে নয়, অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মধ্যেও দেখা যায়। পরিবারের বাইরে দেশের প্রতি ভালোবাসা কতটা বিস্তৃত তা কোনো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে মনে করি। উন্নত দেশগুলোর জীবন ব্যবস্থা নিয়মের ছকে বাঁধা। সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এখানে এত সুশৃঙ্খলভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে যে মানুষ দেশের প্রতি তাদের ভালবাসাকে দমন করে এবং বাস্তবতাকে মেনে নেয় এবং বছরের পর বছর নির্বাসনে কাটায়। ডায়াসপোরায় বেড়ে ওঠা শিশুরা তাদের আইনি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর চেয়ে নিশ্চিত জীবন পছন্দ করে। অন্যদিকে বিদেশে বসে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা, অনিয়ম, দুর্নীতি সম্পর্কে গণমাধ্যম বা স্বজনদের কাছ থেকে যা জানা যায় তাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। বিদেশে জন্মানো ছেলে-মেয়ের ক্ষেত্রে দেশের অনিয়ম ও রাজনৈতিক অসঙ্গতি তারা কল্পনাও করতে পারে না। এখানকার ছেলে-মেয়েরা নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে। রাজনৈতিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা এখানে নয়। যা বাংলাদেশ বিশেষভাবে হাজির হয়েছে।

এই সমস্যাটি যে কারণে আজ প্রকট তা হলো, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন বা তাদের সন্তানদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সবসময়ই একটি আশাহীন ও অনিশ্চিত জীবন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। দেশের খবর জানতে চাইলে আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের মুখেও হতাশা ও ভয়ের কথা শোনা যায়। তার উপরে যারা বিদেশে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির হয়ে কাজ করেন তাদের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তি দিয়ে বিচার করা যায় না। অন্যের দেশে এসে অবস্থানকালে বা অবস্থানকালে নিজ দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামে প্রতিবাদের ঘটনা ঘটলে তা বিশ্বের কাছে জাতিকে লজ্জিত করে। তারা ভুলে যায় বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো বাংলাদেশের রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন দেখছে। নিজের লোকজনের সঙ্গে থাকার আদবও এই প্রবাসীরা মনে রাখেন না।

আর এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে সাধারণ প্রবাসীদের ভাবনা একই রকম। আওয়ামী সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন খুবই দৃশ্যমান। তবে করোনা সংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বাজারে যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও সত্য। তবে উন্নত বিশ্বের সরকারগুলি এই সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে তাদের জনগণ স্বাভাবিক জীবনযাপন ও জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। ফলে এসব দেশের সাধারণ মানুষ রাজনীতির মেরুকরণ নিয়ে খুব একটা চিন্তা করে না- কারণ তারা জানে সরকার নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংকটকাল নিয়ন্ত্রণ করবে। যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
কারণ বাংলাদেশে সরকার বাজার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। এভাবে অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা যে সাধারণ মানুষের জীবনকে ব্যাহত করছে তা জনগণের ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যমেই বোঝা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর পেছনের কারণ হচ্ছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক চাহিদা মেটাতে মানুষের ক্ষুধা বেড়েছে। ফলে জীবন ও জীবিকা এখন মানুষের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার, ভোট বা রাজনীতি নয়। তারা নির্বাচন, ভোট নিয়ে কথা বলতে নারাজ। কোনো সরকারই জনগণের কথা শুনতে চায় না কারণ তারা তাদের ভোট দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে তারা ভাবে না। তারা জানে যে তারা ভোট না দিলেও তারা ভোট পাবে। আর যার পেশিশক্তিসহ নানা ক্যারিশমা আছে তিনিই হবে সরকার। এটা এখন আশ্চর্যজনক নয়।

জনগণের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় এই ন্যাক্কারজনকতা দৃশ্যমান না হলেও এর ক্ষতিকর দিকটি রাজনৈতিক দলগুলো সময়ের আবর্তে বুঝতে পারে। এর পাশাপাশি, জনগণের ভোট বিমুখ হওয়ার কারণ হলো, ১/১১ নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। অন্যদিকে, এক দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু নাম ব্যবহার করে আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সেই উন্নয়নকে মানব উন্নয়নে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি। সরকারের

প্রবাসীদের কাছে বাংলাদেশের রাজনীতির গণতান্ত্রিক চর্চা খুবই পারিবারিক ভিত্তিক রাজনৈতিক চিন্তা বলে মনে হয়। যা তারা এদেশের রাজনৈতিক চিন্তার সাথে মেলাতে পারে না। উন্নত দেশগুলোর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনত জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ 100% নিশ্চিত। এখানে যে কেউ কাউকে ভোট দেবেন তা ভাবা অকল্পনীয়। রাতে ভোট দেওয়াটা হাস্যকর। এখানে এক বা একটি গোষ্ঠী বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকার কোনো বিধান নেই। তারা প্রতিটি পর্যায়ে সংবিধান অনুসরণ করে। প্রতিটি দেশে উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া। সরকার চলে গেলে উন্নয়ন হবে না এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের মতো এখানেও কোনো সরকার চলে গেলে তার প্রকল্পগুলো থেমে থাকে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মানুষের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। আসলে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নামে রাজনৈতিকভাবে সরকারের আসন কুড়াল করার চিন্তা কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য সুফল বয়ে আনে না।

বাংলাদেশে নির্বাচন আসছে। অনেক প্রবাসী নির্বাচনকালীন সময়ে দেশে আসতে ভয় পান। কারণ স্বাভাবিক নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে তারা চিন্তিত। বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই মামলা-হামলা। সাধারণ প্রবাসীরা জীবনের নিরাপত্তা পায় না। আর আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বহির্বিশ্ব নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রবাসীদের মনে আরও ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। তারা দেশের মানুষ নিয়ে চিন্তিত। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে বা জনগণ ভোট দিতে আগ্রহী হবে কি না, তা নিয়ে বাঙালিরা চিন্তা করে না। বরং বিনা কারণে তাদের স্বজনরা কোনো ধরনের হামলার শিকার হচ্ছে কিনা তা ভাবছেন। প্রকৃতপক্ষে, শুধু কাগজে কলমে গণতন্ত্র থাকার এবং বাস্তবে গণতন্ত্র চর্চা না করার পরিণতি বাংলাদেশ উপলব্ধি করছে।

বর্তমান সরকার প্রধান তার এক বক্তৃতায় বলেন, দেশ এখন পঁচাত্তর পূর্বের অবস্থায় রয়েছে। অনেকেই চায় না আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনে আসুক। এ অবস্থায় দলের চেষ্টা করা উচিত যে নিজের যোগ্যতায় জয়ী হবেন তাকেই মনোনয়ন দিতে।’ এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন মহলে।মানুষের কথায়।অন্যদিকে বিএনপি মামলা-হামলা-হামলায় জর্জরিত দল।যদিও বহির্বিশ্বের যাচাই-বাছাইয়ের কারণে সম্প্রতি তারা নিজেদের অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমার হার নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সাধারণভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন বহির্বিশ্বের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এর কারণ গণতন্ত্রের নামে দীর্ঘ একদলীয় শাসন এবং শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতি। একই সঙ্গে বাংলাদেশে রাজনীতির অপবাদের কারণে বেড়েছে অন্যায়, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মামলা। আর এ কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনে বহির্বিশ্ব তাদের নিজস্ব এজেন্ডায় হস্তক্ষেপ করছে। এসব কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে সংবাদ দেখে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সার্বিক অবস্থা প্রবাসীদের হতাশাজনক। সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে, তারা তাদের দেশপ্রেমের বোধ হারিয়েছে। তারা মনে করেন যে তাদের বুকে লাল-সবুজের পতাকা প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি এবং তারা তাদের সন্তানদের ‘চলো বাংলাদেশে যাই’ বলতে পারে না।

About Zahid Hasan

Check Also

বাঁধন নৌকার লোক বলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হইতো: পিনাকি

ছাত্র আন্দোলনে তারকাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *