১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে থাকে সরকারি ছুটি। আমরা স্মৃতিসৌধে যাই শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে। সরকারি ছুটির এই দিনে অফিস আদালত সহ সকল প্রকার সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ। অথচ সেইদিনে প্রতিষ্ঠান খোলা তাও আবার ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো সেখানে অপরাধ। তাও কিনা চাকুরীচ্যুত হতে হয় সেই অপরাধে। এ কেমন প্রতিষ্ঠান যেখানে শহীদদের শ্রদ্ধার বদলে যারা শ্রদ্ধা করে তাদের উল্টে সাজা পাওয়া লাগে!
সাভারের আশুলিয়ায় বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর অপরাধে একটি পোশাক কারখানার ৫ জন শ্রমিককে চাকুরীচ্যুত করেছেন কারখানা কতৃর্পক্ষ।এঘটনায় ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা থানায় ও শিল্পপুলিশে লিখিত অভিযোগ করেছেন। রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে চাকরি হারানোর সংক্রান্ত বিষয়ে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ ও আশুলিয়া থানা পুলিশে অভিযোগ করেন চাকরিহারা ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।
এর আগে, গত শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে আশুলিয়ার লিভেন্স সুয়েটেক্স বিডি লিমিটেডে কারখানায় ডিউটিতে গেলে জ্যাকার্ড অপারেটর ঐ ৫ জন শ্রমিককে চাকরীচ্যুত করে কারখানার এমডি মনির বিশ্বাস তাদের কে বের করে দেয়।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, আশুলিয়ার বাইপাইলে অবস্থিত লিভেন্স সুয়েটেক্স বিডি লিমিটেডের আমি আব্দুল মালেক সরদার, ঐ কারখানার জ্যাকার্ড অপারেটর কার্ড নং ১৩২ ও আমার সঙ্গীয় মোঃ ইমান আলী বকাউল পদবী জ্যাকার্ড অপারেটর,কার্ড নং ১৪৫, মোঃবিপ্লব, জ্যাকার্ড অপারেটর, কার্ড নং ১৩৭, অলিয়ার আহমেদ অপারেটর কার্ড নং ১৪০, আশরাফুল অপারেটর কার্ড নং ১৪৪, বিগত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে যাওয়ার অপরাধে গত ১৮ ডিসেম্বর ডিউটিতে গেলে কারখানার এমডি মোঃ মনির বিশ্বাস আমাদেরকে ডেকে নিয়ে হুমকি প্রদান করে কারখানা থেকে বের করে দেয়।
পরবর্তীতে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন,তোমরা দল কর?নেতা হয়ে গেছ?আমি আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তোমাদের কিভাবে সাইজ করতে হয় সেটা আমার জানা আছে।এই বলে কারখানা থেকে বের করে দেয়।
চাকুরীচ্যুত শ্রমিকরা জানায়, আমাদের আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি যে কারখানা খোলা থাকবে ১৬ই ডিসেম্বর। সেদিন সকালে কারখানা থেকে ফোন দিয়ে সুপারভাইজার বলে কারখানায় আসতে। আমরা তো স্মৃতিসৌধে কারখানায় আসবো কি করে।
এ বিষয়ে কারখানার মালিক মনির বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসলে চাকরীচ্যুতর বিষয়টি এমন কোনো ঘটনা না। আসলে এই শ্রমিকগুলো কারখানায় অনেক দিন থেকে সমস্যার সৃষ্টি করছে। তাদেরকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাওয়ার জন্য চাকরিচ্যুত করা হয়নি। তাদের বেতন দেওয়া হবে। সামনের মাসে সবার বেতনের সাথে দিয়ে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বিডি২৪ লাইভকে বলেন,আমাদের এই শ্রমিক সমাজের কারণেই আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে বিজয় লাভ করেছে। আর সেই শ্রমিকদের আজ জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে দেওয়া হচ্ছে না। এটি দুঃখজনক। আর ১৬ই ডিসেম্বর কারখানা খোলা রাখে কিভাবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না। শ্রমিকরা ইতিমধ্যে থানায় অভিযোগ করেছে। আমরা শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে থানায় যোগাযোগ করবো। পরবর্তীতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যাবো।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন ঘটনা আসলেই আশা করে না কেউ। তীব্র নিন্দা জানানোর মতো একটি ঘটনা। তবে থানায় অভিযোগ করার পরে থানা থেকে পদক্ষেপ নেওয়া নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেয় আর উক্ত ৫ জন তাদের চাকরি ফিরে পাই কিনা। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন, সেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী তাদেরকে ফুল দেওয়া অপরাধ এটা আসলেই ন্যাক্কারজনক ঘটনা।