সাম্প্রতিক নির্বাচন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ ঝাড়লেন বিএনপি নেতা রিজভী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না যেয়ে সরকারের অধীনে নির্বাচনকে একনায়কতন্ত্র নির্বাচন বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। সেইসাথে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের পুরনো ইতিহাসের কথা। তুলে ধরেছেন ১৯৭৩ এ আওয়ামী লীগের একদলীয় সরকার গঠনের ঘটনা। প্রসঙ্গত বর্তমান সরকারের অধীনেই বিএনপি নির্বাচন করতে চায় না, যার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনে উপস্থিত হয়নি বিএনপি। তাই মনের ক্ষোভ গুলো আর ধরে রাখতে পারলেন না বিএনপির শীর্ষ নেতা রিজভী।
৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন আখ্যা দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আট বছর আগে ২০১৪ সালের এই দিনে সারাদেশে ভোটার ও বিরোধী দলের প্রার্থীবিহীন একতরফা বিতর্কিত, প্রতারণামূলক, হাস্যকর ও শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রহসনমূলক একদলীয় পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশে প্রত্যাখ্যাত, জনধিকৃত একদলীয় নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও সারা দুনিয়ায় নিজেদের হেয় প্রতিপন্ন করে।
তিনি বলেন, ৩০০ আসনের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিয়েছিল ২৯৩ আসন, মাত্র ৭টি আসন বিরোধী দলকে দেয়া হয়। দলের প্রার্থীকে জেতাতে হেলিকপ্টারে করে ব্যালট বাক্স ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের কলঙ্কিত রেকর্ডকে ভেঙে ফেলে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সোয়া এক বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জনগণের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেনি। তাদের সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি-কারচুপির আশ্রয় নিতে হয়েছিল। ৩০০ আসনের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিয়েছিল ২৯৩ আসন, মাত্র ৭টি আসন বিরোধী দলকে দেয়া হয়। দলের প্রার্থীকে জেতাতে হেলিকপ্টারে করে ব্যালট বাক্স ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
রিজভী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করতে পরিকল্পিতভাবে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছিল। এরপর যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই সরকারের যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তা ছিল কিম্ভুতকিমাকার ও উদ্ভট।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমানে দেশ থেকে গণতন্ত্র নির্বাসিত। মানুষের বাক-স্বাধীনতায় তালা মেরে দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে নেয়া হয়েছে। বিচারবিভাগ নির্বাহী বিভাগের আয়নায় সবকিছু দেখতে গিয়ে আইনের শাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রায়ের আগেই বিচারপতিদের স্কাইপি আলাপ দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে। বিচারকরা আদেশ দেয়ার আগে তাকিয়ে থাকেন নির্বাহী বিভাগের দিকে। বর্তমানে নব্য বাকশাল নিষ্ঠুর নাৎসীবাদকেও হার মানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, গতকাল তিনি বলেছেন বিএনপির সমাবেশে বাধা দিচ্ছে না সরকার। যদি সরকার বাধা দিতো তাহলে বিএনপির জনসমাবেশে এতো লোক আসলো কিভাবে? ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছে প্রশ্ন সিরাজগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে অস্ত্র হাতে যারা হামলা করেছে তারা কারা?
গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে এরা সবাই যুবলীগের কর্মী। এরাতো সবাই যুবলীগের কর্মী। তারা এখনো ধরা পড়ছেনা কেন? পটুয়াখালীতে বিএনপির সমাবেশে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা অনেককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, গুলি করে অনেককে আহত করেছে, এরা কারা? গাজীপুরের সমাবেশে বাধা দেয়া হয়েছিল কেন? বাগেরহাটে ছাত্রদলের সমাবেশে বাধা দিয়েছিল কেন? কক্সবাজার, নওগাঁ ও ফেনীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে কেন? হবিগঞ্জে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ শত শত নেতাকর্মীর উপর গুলি করলো কেন? শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অপরাধে বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা হচ্ছে কেন? কেন নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে?
খুব এর পাশাপাশি যুক্তির সাথে তুলে ধরেছেন অনেকগুলো প্রশ্ন, তবে কে দেবে এ প্রশ্নের উত্তর! যদিও এ ব্যাপারে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে কোন কথা বলা হয়নি। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার পক্ষের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় জনগণের সরকারি করবে নির্বাচন। তবে রিজভীর এসব ক্ষোভের কারণে সরকার পক্ষ থেকে হয়তো নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না, কারণ সরকার দল থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিএনপি যদি ইসি গঠনে নাও যায় তবুও নির্বাচন থেমে থাকবে না। এখন দেখার বিষয় পরবর্তীতে কি হয়।