বর্তমান সরকার কওমি মাদ্রাসার দিকে নজর দিয়ে এর উন্নয়ন বৃদ্ধিকল্পে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তবে কওমি মাদ্রাসাকে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে মানোন্নয়ন বৃদ্ধি করতে। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজত নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি পাঠানোর বিষয় নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত কর্তৃপক্ষ আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআ’তিল কওমিয়া বাংলাদেশ, হেফাজত নেতার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডাকা বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে অপারগতা জানিয়েছে।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দেশের শীর্ষ আলেমরা এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে।
রোববার বোর্ডের অফিস ম্যানেজার আছিউর রহমানের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হেফাজতে ইসলামের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর পাঠানো চিঠিটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে হায়াতুল উলয়া বা সংশ্লিষ্ট ছয় বোর্ডের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাছাড়া হেফাজতের ওই নায়েব আমির হায়াতুল উলয়ার কেউ নন। তার পাঠানো চিঠির ভিত্তিতে হাইয়াতুল উলয়া ১০ আগস্ট ডাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অংশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করছে।
হাইয়াতুল উলয়া সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় আল হাইআর এর সিদ্ধান্ত জানাতে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত অযোগ্যতার চিঠি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে পৌঁছে দেন।
ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি নুরুল আমিন, তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়ার সভাপতি মুফতি আরশাদ রাহমানী, লালবাগ মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি ফয়জুল্লাহ, বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, জাতীয় দ্বীনি শিক্ষা বোর্ডের সহ-সভাপতি মাওলানা মাওলানা মাওলানা ও মাওলানা মাদরাসা। একই বোর্ডের মহাসচিব মুফতি আলী মো.
সেই চিঠিতে বৈঠকের এজেন্ডায় উল্লিখিত হেফাজতে ইসলামের গত বছরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাশকতা ও সংগঠনের নায়েবে আমীর মিজানুর রহমান চৌধুরীর ৮ পরামর্শের সঙ্গে আল হাইআ’র কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়। একই সঙ্গে মিজানুর রহমানের চিঠির বিষয়টি তার এখতিয়ারের বাইরে বলেও জানিয়েছেন আল হাইআ।
এদিকে কওমি মাদ্রাসাগুলোর মানোন্নয়নের বিষয়ে সংগঠনের নায়েবে আমীর ও গাজীপুর দেওনার অধ্যক্ষ পীর মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠির বিষয়ে তাদের অবস্থান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে হেফাজত আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া ও মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, দেওনা পীরের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর চিঠির সঙ্গে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। তার চিঠির সঙ্গে সংগঠন একমত নয় বলেও জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির ও গাজীপুরের দেওনার পীর প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান চৌধুরী কওমি মাদ্রাসাগুলোর মানোন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। হেফাজত নেতার চিঠি আমলে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকও ডাকা হয়েছে। এ নিয়ে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৫ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন হেফাজত নেতা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। মিজানুর রহমান ‘কওমি ধারার ধর্মীয় শিক্ষা এবং শিক্ষকদের মান উন্নয়নে সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ’ শীর্ষক চিঠিতে আটটি সুপারিশ করেছেন।
এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট কওমি মাদ্রাসার বোর্ড প্রধানদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর কওমি আলেমদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। কয়েকজন দায়িত্বশীল আলেম মনে করেন, সরকারের অভ্যন্তরের কারো পরামর্শেই মিজানুর রহমান চৌধুরী এ প্রস্তাব দিয়েছেন।
কওমি মাদরাসার দায়িত্বশীল আলেমদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেওনার পীর হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী নিজে আলেম নন। এছাড়া তিনি কওমি মাদ্রাসার কোনো শিক্ষা বোর্ডে নেই। শুধু গাজীপুরের দেওনা এলাকায় তার একটি মাদ্রাসা আছে। তিনি অতীতে কওমি সনদের স্বীকৃতি বা এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এমন প্রেক্ষাপটে কওমি মাদ্রাসার মান উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার চিঠি পাঠানো এবং সেই চিঠির নোটিশ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক কওমি আলেমদের বিস্মিত করেছে।
তবে এই চিঠি পাঠানোর বিষয়টিকে অনেকে ইতিবাচকভাবে দেখছে কারন চিঠিতে মান উন্নয়নের জন্য চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। তবে এই প্রস্তাব কাদের সুপারিশ বা সিদ্ধান্তে পাঠানো হয়েছিল সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে তিনি একটি মাদ্রাসা খুলে এমন ধরনের কাজ করেছেন সেটা অনেকেই নেতিবাচকভাবে দেখছেন।