Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তিন বাহিনী প্রধানসহ শীর্ষ প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তিন বাহিনী প্রধানসহ শীর্ষ প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক

আসাদুজ্জামান খান কামাল হলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই সম্মানীয় পদে অধিষ্ঠিত হবার পর তিনি সততা ও নিষ্ঠার সহিত টার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশ থেকে সকল প্রকার অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে ফলে দেশের মানুষ নিরাপদে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারছে। সম্প্রতি হানা গিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় তিন বাহিনী প্রধানসহ শীর্ষ প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করছেন।

মিয়ানমারে সামরিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াই তীব্রতর হয়েছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। বর্ডার গার্ড বিজিবি ও কোস্টগার্ডের পর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।

মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা বাংলাদেশে আসায় গত এক মাসে চারবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও আরসা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে বলে অভিযোগ করেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশে ওই দুই দলের ঘাঁটি ও পরিখা রয়েছে। সেই দাবি প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্ত পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে অনানুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করে আসছে। একইভাবে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুত।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিন সেনাপ্রধানের জরুরি বৈঠক

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রীয় সব সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে জনবল বাড়াতে বলা হয়েছে। সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে যাতে আর কোনো রোহিঙ্গা ঢুকতে না পারে।

সেনা মোতায়েন হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আপাতত তারা এর প্রয়োজন দেখছেন না।

ওই বৈঠকের তিন দিন পর বুধবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানসহ মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীসহ সবাই সর্বদা প্রস্তুত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশে নেই। আমরা পরিস্থিতি দেখছি। আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধের গোলাবারুদ সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের দেশে আসছে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। যা ঘটছে তাতে আমাদের মানুষ আতঙ্কিত। সেজন্য আমরা এই বৈঠক করেছি। সেনাবাহিনীসহ আমরা সবাই বলেছি, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সব সময় প্রস্তুত। তারা এখনও প্রস্তুত। ‘

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, আমরা কাউকে ‘গণনা’ করি না। সেনাবাহিনীসহ সবাই যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত। বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি সপ্তাহে লন্ডন সফরকালে বলেছেন, সীমান্তে মিয়ানমারের উস্কানি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংযম দেখাচ্ছে। গত সোম ও মঙ্গলবার বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে পরিস্থিতি তুলে ধরার সময় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খুরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে মিয়ানমারের সমস্যা সহ্য করছে। বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না।

গতকাল বিকেলে ঢাকায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, শেষ পর্যন্ত শান্তির পক্ষে অবস্থান বজায় রাখবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়- এটাই আমাদের জাতীয় নীতি। আমরা কখনই যুদ্ধকে উৎসাহিত করি না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এখানে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে আসিনি। মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জোরপূর্বক আমাদের দেশে পাঠানো ছাড়া অন্য কোনো বৈরী আচরণ নেই। ‘

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বীরের জাতি, আমরা সব সময় প্রস্তুত। উসকানির অনেক চেষ্টা, কার দ্বারা বা কাদের দ্বারা, আমরা জানি না। আমরা যা দেখছি, তারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। সীমান্তে যা হচ্ছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই।

সীমান্ত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে

কক্সবাজার থেকে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু সীমান্তের ৩৪/৩৫ সীমান্ত পিলারের বিপরীতে মিয়ানমারের ভেতরে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আবার বিকট শব্দ হয়।

গতকাল সন্ধ্যায় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের স্থানান্তরের বিষয়টি বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি খারাপ হলেই তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

অপরদিকে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য বাবুল মিয়া জানান, মঙ্গলবার সকাল ও রাতে পালংখালী আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে গুলির শব্দ ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের বিস্তার ঘটছে

বিবিসি জানায়, সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বা সরকারের বিরোধের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু এখন তা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গণতন্ত্রপন্থী যোদ্ধারা সংখ্যালঘু জাতিগত বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সাথে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে।

সীমান্ত বা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলি এক সময় সংঘর্ষের প্রবণ ছিল, কিন্তু এখন সহিংসতা মধ্য মায়ানমারেও ছড়িয়ে পড়েছে।

পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন যে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি শীঘ্রই দেশটিকে পূর্ণ মাত্রার গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত করতে পারে। মিয়ানমার জুড়ে সংঘাতের মধ্যে রাজধানী এবং আশেপাশের শহরগুলিতে একটি রাতের কারফিউ জারি করেছে সামরিক জান্তা। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শহরে চলাচল নিষিদ্ধ। একবারে চারজনের বেশি লোকের জমায়েত, প্রতিবাদ করা এবং জান্তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলা নিষিদ্ধ।

থাইল্যান্ড ভিত্তিক মায়ানমার পত্রিকা ইরাওয়ার্দি জানিয়েছে যে সেনাবাহিনী কারফিউ ছাড়াও রাজধানীতে বাঙ্কার তৈরি করছে। এ ছাড়া নতুন থানা নির্মাণ ও নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে, যেসব এলাকায় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বা তাদের পরিবার বাস করে সেখানে চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

মিয়ানমারের গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহিংসতাপ্রবণ এলাকা ছাড়াও মিয়ানমারের অনেক শহরে সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করেছে এবং জনগণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গত মঙ্গলবার নতুন আদেশ জারি করেছে তারা। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারবিরোধী লেখা ‘লাইক’ বা ‘শেয়ার’ করলে কারাদণ্ড হতে পারে।

একটি হল শীর্ষ সাতটি সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠী

বিবিসি জানায়, মিয়ানমারের শীর্ষ সাত সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা গতকাল ওয়া রাজ্যের পাংসাংয়ে বৈঠক করেন। ২০২০ সালে কোভিড মহামারী শুরু হওয়ার পর এবং 2021 সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর এটি তাদের প্রথম বৈঠক। এই গোষ্ঠীগুলির প্রায় ৩০০০০ সদস্য রয়েছে বলে মনে করা হয়।

আরাকান আর্মির একজন মুখপাত্র বলেছেন যে তারা প্রয়োজনে বৈঠকে বসেছিলেন। নিজেদের মধ্যে ঐক্য জোরদার করাই তাদের লক্ষ্য।

বিবিসির বার্মিজ সার্ভিস জানিয়েছে যে বার্মিজ সেনাবাহিনী এখন উত্তর রাখাইন রাজ্য, চীন রাজ্য, শান এবং কাচিন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে। ভারী অস্ত্র ও ট্যাঙ্কের সাহায্যে তারা অনেক শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা সেখানে বেশ কয়েকটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং গ্রামে গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সরকার সব ধরনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আক্রমণে খুব সতর্ক। অন্যায়ভাবে কেউ আঘাত করবে আর বাংলাদেশ সেটা মেনে নিবে তা ককনোই হতে দেওয়া যাবেনা। বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। তবে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে ছেড়ে কথা বলবে না বাংলাদেশ। সর্বক্ষেত্রে শান্তি বজায় থাকুক বাংালদেশের মানুষ এটাই চায়।

About Shafique Hasan

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *