শনিবার রাত ১০টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির কাশেম জুট মিল সংলগ্ন বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। ওই আগুনে রাসায়নিক পাত্রে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশেপাশের বাড়ির দেয়াল ও জানালা ভেঙে পড়ে। এই ঘটনা দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকেদের খবর দেওয়া হয়।
সেখানেই ফায়ার সার্ভিসের এই সদস্য নিহত হয়েছেন । তার নাম শাকিল আহমেদ তরফদার (২৩)। সে তার মাকে হজে যেতে চেয়েছিলেন। ঈদুল আজহায় মাকে গ্রামের বাড়িতে আসতেও বলেছে। কিন্তু শাকিলের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। শাকিলের মাকে আর হজ করতে দেওয়া হয়নি।
সোমবার (৮ জুন) সকালে বটিয়াঘাটা উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে সুখদাড়া গ্রামে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীর গুলিতে শাকিল নিহত হন। শাকিলের মা, বাবা, ভাই ও স্বজনদের শোকের মাতমে সুখদাড়া গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। যাঁরা তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এসেছেন তাঁদের চোখে জল এসে গেছে। শাকিলের মরদেহ বাসায় পৌঁছার অপেক্ষায় তারা।
পঞ্চাশ বছর বয়সী শাকিলের বাবা আবদুস সাত্তার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তিনি তার প্রিয় ছোট ছেলেকে হারিয়ে হতবাক। সারা ঘরে মানুষ। আবদুস সাত্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শাকিল ২০১৬ সালে বটিয়াঘাটা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরে ২০ মে, ২০১৯ তারিখে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেয়। তারা তিন ভাই। তাদের মধ্যে শাকিল ছিলেন সবার ছোট। আমার মামা রিপন ফায়ার সার্ভিসে কাজ করেন। এখন বটিয়াঘাটা ইউনিটে কর্মরত।
তিনি জানান, বটিয়াঘাটা থানা থেকে শাকিলের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইলে তার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। আমার শাকিলের কি হয়েছে? আমার শাকিল কি কোন বড় বিপদে পড়েছে? অজানা আতঙ্কে বুক ভরে গেল। এরপর রোববার সকালে জানতে পারি আমার শাকিল আগুনে পুড়ে মারা গেছে।
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, শাকিলকে বিয়ে করতে কনেরা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। দু-এক জনের পছন্দও হয়েছে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।
অচেতন অবস্থায় শাকিলের মা জেসমিন বেগমকে বারান্দায় ঘিরে রাখে প্রতিবেশী ও স্বজনরা। ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরলে সে চিৎকার করে বলে, আমার শাকিল কোথায়? তুমি আমার শাকিলকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও।
শাকিলের স্বজনরা জানায়, আগুন নেভাতে যাওয়ার আগে শাকিল তার মাকে ফোন করে। এ সময় তিনি মায়ের কাছে দোয়া চান।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লেগে আশপাশের গ্রামের ছয়টি পুকুরের পানি ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তবে গত শনিবার রাতে শুরু হওয়া আগুন সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে, ডিপো থেকে ৭০০ মিটার দূরে একটি নিকটবর্তী গ্রামে একটি বড় পুকুর থেকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকায় পানি সংকটের কারণে নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ পানিবাহী গাড়ি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।