স্বপ্ন দেখতে কে না চায়? কারও স্বপ্ন পূরন হয়, আবার কারও কারও স্বপ্ন পূরন হওয়ার আগেই পাড়ি দিয়ে হয় না ফেরার দেশে। ঠিক তেমনই স্বপ্ন দেখেছিলেন খোকন সিকদারও। পরিবার নিয়ে একদিন স্বপ্নের পদ্মাসেতু পারি দিবেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরন হলো না তার। এর আগেই সবাইকে কাঁড়িয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন খোকন।
জানা যায়, শনিবার রাত ৯টায় খোকন সিকদার তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে মোবাইল ফোনে কল করেন। বাচ্চাদের সাথেও কথা বলেছেন। সকালে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সকালে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘুম ভাঙে তাহমিনার।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে রোববার সকালে দুই বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে ছুটে যান তাহমিনা। আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুপুরে স্বামীর নিথর দেহ নিয়ে ফেরিতে করে পদ্মা পাড়ি দেন তিনি। কিন্তু ২৬ জুন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে চেয়েছিলেন খোকন।
রোববার (১৯ জুন) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে শিমুলিয়া-সাত্তার মাদবর মঙ্গলমাঝি ঘাট নৌপথে চলাচলকারী দুটি ফেরির মুখোমুখি সংঘর্ষে খোকন নামে এক পিকআপ চালক নিহত হন।
তাহমিনা জানান, তার স্বামী ১৫ বছর ধরে ফেরিতে পদ্মা পারাপার করছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করে নিরাপদে পৌঁছেছেন। এভাবে মারা যেতে পারে কখনো ভাবিনি। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে। ২৬ জুন চার সন্তানকে নিয়ে তিনি পদ্মা সেতু পার হতে চেয়েছিলেন।
খোকনের স্ত্রী বললেন, আমার সব শেষ। আমি আমার স্বামীর সাথে জীবনের শেষবারের মতো পদ্মা পাড়ি দিচ্ছি, কিন্তু প্রাণহীন নিথর দেহ নিয়ে। চার সন্তান নিয়ে এখন কোথায় দাঁড়াবো?
মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম জানান, ফেরি দুর্ঘটনায় নিহত খোকনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো কোনো মামলা হয়নি।
খোকন সিকদারের অকাল মৃত্যুর খবরে যেন শোকের কালো ছায়া নেমে এসেছে পরিবার-স্বজনদের মাঝে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তাকে এভাবে হারাতে হবে যেন কখনও কল্পনাও করেনি কেউ।