Saturday , December 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / স্বপ্নের ফেরিওয়ালা সেই বাবা ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের পরিচয়

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা সেই বাবা ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের পরিচয়

বাবার হাত মানেই হলো ভরসা এবং নিরাপত্তার একটি আশ্রয়। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হচ্ছে ছেলে। সতর্কতা নিয়ে হয়তোবা এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া ছেলে ব্যস্ত রাজপথ পার হয়ে যেতে পারবে। কিন্তু বাবা তার নিরাপদে পার হওয়ার বিষয়টি আরো নিশ্চিন্ত করতে চান। এই বাবার নিজের দুটি পা নেই তা কি হয়েছে সন্তান তো সন্তানই। নিজের দুই পা নেই, তাই চলাচলের জন্য রাবার দিয়ে আবৃত হাটুতে ভর দিয়েই ছেলেকে এগিয়ে দিতে নেমে পড়েন রাস্তায়।

ব্যস্ত সকাল। ঢাকার বেপরোয়া যানবাহনও ব্যস্ত! নুরে মক্কা নামক বাস ছুটে আসছে। অন্যদিকে, পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে পৌঁছাতে হবে। বাম হাতের মুঠিতে সন্তানের হাত চেপে ধরে ডান হাতের ইশারায় বাস থামিয়ে দেন বাবা। তারপর ধীরে ধীরে, রাবার-মোড়ানো হাঁটুতে শরীরের ভারসাম্য রেখে, এসএসসি পরীক্ষার্থী সন্তানকে ঝুঁ’কি থেকে নিরাপত্তার দিকে এগিয়ে নিয়ে যান; স্বপ্ন থেকে সম্ভাবনার দিকে।

গতকাল রবিবার ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন। পরীক্ষার্থী সন্তানকে হাতে ধরে কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন শারীরিকভাবে অসহায় একজন বাবা—এমন কয়েকটি ছবি তুলে একজন সামাজিক মাধ্যমে দিলে ওয়াল থেকে ওয়ালে ছড়িয়ে ক্রমে তা ভা’ইরাল হয়ে যায়। জানা যায়, এই পরীক্ষার্থীর নাম সালেহ আহমেদ ফাহাদ। পড়ে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে ফাহাদ। পরীক্ষা চলছে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টমেন্ট কলেজ কেন্দ্রে।

ভাইরাল হওয়া ছবিতে ফাহাদের সঙ্গে তার বাবাই ছিলেন—দেশের একটি স্বনামধণ্য সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বনানী বিদ্যানিকেতনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রিয়াংকা হালদার শিখা। তিনি বলেন, ‘বাবা অনেক কষ্ট করে ফাহাদকে পড়াচ্ছেন। আমরা প্রতিষ্ঠান থেকেও সহায়তা দিয়েছি। তার কাছ থেকে কোনো বেতন বা ফি নেওয়া হতো না।’

ফাহাদের স্কুলের শ্রেণিশিক্ষকদের একজন মো. কবির আহমেদ জানান, পরিবারটি অসহায়। মাধ্যমিকের ফরম পূরণ ফি ছিল চার হাজার টাকা। ফাহাদের বাবা দুই হাজার টাকা জোগাড় করতে সক্ষম হন। তখন মো. কবির আহমেদ নিজে থেকে আরো এক হাজার টাকা দিয়ে ফরম পূরণের ব্যবস্থা করেন। তিনি আরো জানান, ফাহাদের বড় বোন বনানী বিদ্যানিকেতন থেকেই মাধ্যমিক পাস করে গেছে। বাবা ওমর ফারুক পিকআপ ভ্যান ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতেন।

বিশ্বব্যাপী চলমান পরিস্থিতিতে তিনি তার গাড়িটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। বিশেষ ছাড় দিয়েছে রাজধানীর ক্যামব্রিয়ান কলেজ কতৃপক্ষ আর তাই সেখানে পড়তে পারছে বোন ফারজানা। হাতে তৈরি পোশাক বিক্রির মাধ্যমে কিছু উপার্জন করে অসহায় বাবাকে কিছুটা হলেও সাহায্য করার চেষ্টা করছেন ফারজানা।

বাড্ডায় অবস্থিত ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের সামনের এই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারন করেছেন কোনো একজন ব্যক্তি। অসংখ্য শেয়ার হওয়া এই ছবিগুলো লেখক ভট্টাচার্য যিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন তার ভাষ্যমতে, এই সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবার বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলাধীন রাজগঞ্জ ইউনিয়ন এলাকায়।

About

Check Also

হাসিনাকে গার্ড করতে গিয়ে আমরা অশান্তি চাই না, ও দেশে ফেরত যাক

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার পতন ঘটে। এর পর থেকে তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *