বিএনপি ২০২১ সালের মার্চ থেকে নির্বাচন এড়িয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন এলে গত দুই বছরে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এ সময়ে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নাম লেখানো বিপরীত দলের যে নেতা, তার ওপর হাইকমান্ড থেকে বহিষ্কারের খড়গ নেমে এসেছে; যার সর্বশেষ উদাহরণ সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। তৃণমূলের সক্রিয়তা জানাতে অন্য যেকোনো দলের চেয়ে এই নির্বাচন বিএনপির জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ- এমনটাই মনে করছেন দলের একটি মহল। নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসলেও নির্বাচন ঘিরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির অনেক তৃণমূল নেতা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার ৪৮৫টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। গত ১৬ জানুয়ারি ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ধাপে ধাপে নির্বাচন হবে। রোজার আগে প্রথম ধাপের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে কয়েকটি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
তাছাড়া আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটাই বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য লোভনীয় করে তুলছে। দলীয় প্রতীক না থাকায় স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ভালো সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তাদের একটি বড় অংশ। একইসঙ্গে তাদের মতে, পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে ইতিমধ্যেই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ দল। দুই বছর ধরে তারা ভোটের মাঠে উপস্থিত নেই। বিএনপির হাইকমান্ড নির্বাচনের ট্রেন না ধরার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে দলটিকে পুরোপুরি নিখোঁজ হতে হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নিলে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন, অনেকে পেশাজীবী হয়ে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে থাকা নেতাদের দাবি, বিএনপির মূল শক্তি তৃণমূল। আর এখন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই তাদের। সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে না পারলে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকা যদি আন্দোলনের পক্ষে না হয়, তাহলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। .
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিভক্তি বিএনপি প্রার্থীর জন্য সহায়ক হবে বলে মনে করেন এ অংশের নেতারা। সরকারবিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে অন্তত দুই শতাধিক উপজেলায় উপজেলা চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হওয়ার সক্ষমতা এখনো বিএনপির রয়েছে।
তারা বলছেন, এ বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ডকে নমনীয় হতে হবে। যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না, তাই যাদের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা আছে তাদের প্রকাশ্যে না হলেও দলের অভ্যন্তরীণভাবে উৎসাহিত করা উচিত। যেহেতু স্থানীয় নির্বাচন সরকার পরিবর্তন করে না, তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ আন্দোলনের অংশ হতে হবে। নির্বাচন এলে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা বেরিয়ে আসার সুযোগ পাবেন, যা চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।
এদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মতামত রয়েছে। তাদের দাবি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর একই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে তা বিএনপির নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এটি সরকারকেও সহায়তা করবে।
বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় এর আগেও অনেককে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের কী জবাব দেবে দল? তাছাড়া উপজেলা নির্বাচনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তা এই মুহূর্তে বহন করতে পারছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। অকেজো নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত নয় বলে মনে করছেন নির্বাচন বিরোধীরা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও প্রকট হবে।
দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হলেও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। ওই ফোরামের বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।