বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবায়েদ রহমানের নাম গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশ। আর এ নিয়ে এখন আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও। এবার এ নিয়ে কথা উঠেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এ। সেখানকার মুখপাত্র নেড প্রাইস এ নিয়ে নিজের মন্তব্য প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংলাপ, বিতর্ক, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং জনগণের অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে এসব অধিকারের পথ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। আর এসব সংকীর্ণ পথ রুদ্ধ হলে যথাযথ উদ্বেগ প্রকাশে পিছপা হবেনা যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দেশবিরোধী আখ্যা দেওয়া ২২ সাংবাদিকের তালিকা প্রকাশ, সভা-সমাবেশে বাধা এবং জোবাইদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ড. রহমান।
ব্রিফিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধিত্বকারী একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারি জানতে চান- আজ আমরা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তির অবসানের আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন করছি। আর বিদেশে অবস্থানরত ২২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই সাংবাদিকরা বিদেশ থেকে স্বাধীন মতপ্রকাশের চর্চা করছেন। যা বাংলাদেশে খুবই কঠিন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা আইনে মানহানি বলে গণ্য। আর এই আইনের আওতায় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো পরোয়ানা ছাড়াই ইচ্ছামত যে কাউকে তল্লাশি ও আটক করতে পারবে। এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চান?
জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, “আমরা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক পথের ক্রমাগত সংকীর্ণতা এবং নাগরিক অধিকার সংকুচিত হওয়ার বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।” আমরা এই উদ্বেগটি সর্বজনীন এবং ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করি। আমি আগেই বলেছি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যের স্বাধীনতা সার্বজনীন অধিকার। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অধিকারগুলিকে সমুন্নত রাখতে সর্বদা পাশে থাকবে, তা সে বাংলাদেশেই হোক বা বিশ্বের যে কোন জায়গায়।
অপর এক প্রশ্নে এই প্রতিবেদক জানতে চান- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ মানুষ সমাবেশ করছে। এসব সমাবেশে সরকার নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
সম্প্রতি লন্ডনে জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বিরোধী দলীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ড. ডাঃ জোবাইদা রহমান একজন ডাক্তার এবং রাজনীতির সাথে জড়িত নন। কিন্তু সরকার তাকেও রেহাই দিচ্ছে না। আপনি এই বিষয়ে আপনি কি বলেন?
জবাবে, মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ মুখপাত্র বলেছেন, “আমি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা গৃহীত পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে বিশেষভাবে কথা বলার অবস্থানে নই।” তবে আমি আগে যা বলেছি, এখনও বলছি, গতিশীল আলোচনা, নাগরিকের অংশগ্রহণ, নাগরিক অধিকার, যুক্তির জায়গা গণতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ, তা বাংলাদেশে হোক বা বিশ্বের যে কোনও জায়গায়। আমরা যখন দেখব এই রাস্তাগুলো অবরুদ্ধ হচ্ছে, অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তখন আমরা যথাযথ উদ্বেগ নিয়ে এগিয়ে আসতে দ্বিধা করব না।
প্রসঙ্গত, তারেক রহমান এবং জোবায়েদ রহমান একটা সময়ে বাংলাদেশে থাকলেও নানা ধরনের মামলা আর বিএনপির ক্ষমতার রদবদল হওয়ার পরে তারা দুজনেই চলে যান লন্ডনে। আর সেখানে থেকেই দল চালাচ্ছেন তারেক রহমান। তার স্ত্রী জোবায়েদ মাঝে মধ্যে বাংলাদেশে আসলেও এবার আর এই পথটিও রইলো না খোলা।