বর্তমানে অনেকটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লজ্জাজনক হারের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে টাইগাররা। আর এরই মধ্য এবার এক দুঃসংবাদ দিলেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস’র প্রধান আকরাম খান। এর আগে গতকাল সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এ সংবাদ আগেই দিয়েছিলেন তার স্ত্রী সাবিনা আকরাম। আর এবার এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করলেন আকরাম নিজেই।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস’র প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরে দাড়ালেন তিনি। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যমে নিজের পদত্যাগের কথা জানান তিনি। এর আগে সোমবার বিকেলে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে আকরামের স্ত্রী সাবিনা আকরাম তার পদত্যাগের বিষয়টি জানান। আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবিকে শিগগিরই নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানাবেন আকরাম।
দায়িত্ব ছাড়ার কারণ হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু না বললেও, অভিমান থেকেই এই সিদ্ধান্ত তেমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন আকরাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক সিদ্ধান্ত তাকে না জানিয়ে নেয়া হতো এমনটা উল্লেখ করেছেন তিনি। আকরাম বলেন, ‘মহান আল্লাহতালা কিংবা ধর্মের পরে আমার কাছে ক্রিকেটই সব। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাঁতার কাটতে হয়েছে। অনেক কিছুই আমার অজান্তে হতো। সবাই আমার দিকে আঙ্গুল তুলেছে। আর নিতে পারছিলাম না। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। যিনি দায়িত্ব নিবেন তার জন্য আমার শুভকামনা থাকবে, সব রকম সাপোর্টও থাকবে। কারণ ক্রিকেট খেলেছি বলেই আজ আমি আকরাম খান।’
২০১৪ সালে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে নির্বাচিত কমিটিতে প্রথমবার ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এক বছর যেতে না যেতেই তার জায়গায় দায়িত্ব পান নাঈমুর রহমান দুর্জয়। কিন্তু বছর ঘুরতেই আবারও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আকরাম। সেই থেকে টানা ৬ বছর দায়িত্ব চালিয়ে গেছেন তিনি। দলের সাফল্য-ব্যর্থতা সবটাই দেখা হয়েছে তার সময়ে। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, স্টিভ রোডস, রাসেল ডমিঙ্গোসহ সবগুলো কোচের সঙ্গেই কাজ করা হয়েছে তার। দায়িত্ব পালনকালে বেশ কিছু বিতর্কিত ঘটনাও ঘটেছে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার অবসর কাণ্ড, সাকিবের টেস্ট থেকে ছুটি নেওয়া, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে মুশফিককে না পাওয়াসহ ছোটখাটো অনেক ঘটনাই আছে।
খালেদ মাহমুদ সুজন মিরপুরে একদিন বলছিলেন, ‘আমার মনে হয় আকরাম ভাইয়ের সঙ্গে খেলোয়াড়দের সেভাবে দেখাও হয় না। কারণ আকরাম ভাই যে বোর্ডে কখন আসছেন, সব সময় যে আসেন, তাও কিন্তু নয়। আমি মাঠের লোক, মাঠে থাকি, বোর্ডে যাই। সবার সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। আকরাম ভাই হয়তো ব্যস্ত থাকেন, উনার ব্যবসা আছে। কিন্তু হয়তো খেলোয়াড়দের সঙ্গে ওই সময় তার দেখা হয় না। আমার সঙ্গে যেভাবে মন খুলে কথা বলতে পারে, সেটা হয়তো আকরাম ভাইয়ের সঙ্গে পারে না। ওই সম্পর্কটা গড়ে ওঠে না। যে কোনো টপিক নিয়ে আমাকে বলতে পারে, ওই সময় আকরাম ভাইকে তো তারা পায় না।’
সাকিব আল হাসান শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ছুটি নিয়ে আইপিএল খেলতে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আকরাম ভাই বারবার বলেছেন, আমি খেলতে চাই না। আমার ধারণা উনি চিঠিটি পড়েননি। ওই চিঠিতে আমি কোথাও বলিনি যে টেস্ট খেলতে চাই না। আমি সেখানে এটা পরিষ্কার করে দিয়েছি, আমার আইপিএল খেলার কারণ আসলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর দল খালেদ মাহমুদ সুজনের অধীনে সাকিব অনুশীলন করলেও আকরাম কিছুই জানতেন না। তার দেশে পৌঁছানোর আগেই পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো হয়ে যায়। নতুন করে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাতেই ছিলেন না আকরাম। আর এ বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো অনেক অসুস্তি ছিলেন আকরাম খান। আর এরই জের ধরে অবশেষে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস’র প্রধান থেকে সরে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে হঠাৎই তার এমন সিদ্ধান্তে অনেকটা অবাক হয়েছেন প্রায় সকলেই।