Tuesday , December 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বশান্ত স্বামী হাকিম, এবার হাজির বাদ্যযন্ত্রের তালেতালে রোগ সারানো কবিরাজের কাছে

স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বশান্ত স্বামী হাকিম, এবার হাজির বাদ্যযন্ত্রের তালেতালে রোগ সারানো কবিরাজের কাছে

যত দিন বছর পর হচ্ছে চিকিৎসার মানও উন্নত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে এমনও কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে আধুনিকত্ত এখনো পৌছায়নি। তারা এখনো পুরানো দিনের সেই চিকিৎসা গ্রহন করে আসছে। তবে তাতে তাদের সুফল কতো জানতে সংবাদ মাধ্যমের যাত্রা সেই গ্রামে যেখানে এখনও কবিরাজ আর ঝাড়ফুঁকে ভরসা।

চিকিৎসার অগ্রগতির এই যুগেও কুড়িগ্রামের বহু মানুষ কবিরাজ ও ফকিরের দোরগোড়ায় আসেন। ভুয়া ডাক্তার, কবিরাজ ও ফকিরদের মুখে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে না। তবে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে কুসংস্কার থেকে বের করে আনতে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬টি নদীর ৩১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথে কুড়িগ্রামে ৫ শতাধিক চর রয়েছে। এসব চরে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষের বসবাস।

জেলায় ৯টি উপজেলার ৬৩টি ইউনিয়ন এবং তিনটি পৌরসভায় প্রায় ৭৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। প্রায় প্রতিটি পৌরসভার সাথে নদীর যোগাযোগ রয়েছে। মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন আটটি ইউনিয়ন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকটি গ্রামে একদল মানুষ বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচছে। এ দৃশ্য দেখে অনেকেই ভুল করে ভাবতে পারেন এগুলো গ্রামীণ যাত্রাপালা বা জারি গানের কোনো সমাবেশ।

আসলে এগুলো ‘বানসালি ঝরা’ গ্রামের প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা। গ্রামে পঙ্গু বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত এখানে ‘বাঁশি রোগ’ নামে পরিচিত। কবিরাজ নাচ-গানের মাধ্যমে এই রোগে আক্রান্ত এক নারী রোগীর চিকিৎসা করছেন।

এখনও কবিরাজ আর ঝাড়ফুঁকে ভরসা
জেলার রাজারহাট উপজেলার চিনাই ইউনিয়নের পূর্ব দেবত্তর মোগলতারি গ্রামের চৌকিদার আব্দুল হাকিমের স্ত্রী রহিমা বেগম প্রায় দুই মাস ধরে শয্যাশায়ী। এক অভাবী পরিবারে স্ত্রীর চিকিৎসা করতে গিয়েছিলেন মৃত স্বামী হাকিম। এখন পরিবারের শেষ ভরসা এই কবিরাজি চিকিৎসা।

গানের সুরে কবিরাজ বলেন, ‘নবী আমার বন্ধু, তোমার উম্মতরাই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কষ্টের জন্য সুপারিশ করবে। আলীর নামে জোরে জোরে দাইয়া নামাও।

নানা শ্লোক গেয়ে বৃদ্ধ-শিশুরা দল বেঁধে শয্যাশায়ী রোগীর চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

উত্তরাঞ্চলের প্রান্তিক জনপদ কুড়িগ্রামে এখনো চিকিৎসা চলছে। কবিরাজ প্যারালাইসিস, ফ্র্যাকচার এবং জিন খুলে নেওয়া থেকে শুরু করে ত্বকের রোগের চিকিৎসাও করেন।

কুড়িগ্রামের চর এলাকা। বন্যার সময় নৌকায় করে হাঁটতে হয় এবং শুষ্ক মৌসুমে অগভীর নদীর পাড় ধরে হাঁটতে হয়। ফলে অসুস্থ শরীর নিয়ে কারও পক্ষে সরকারি চিকিৎসা সেবা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ভুয়া ডাক্তার-কবিরাজের চিকিৎসা কিংবা ফকিরের ঘামাচির ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামবাসী। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা সদরের কোনো যোগাযোগ নেই। যে কারণে এসব প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ হাসপাতাল বা আধুনিক চিকিৎসকের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তারা ভালো চিকিৎসা সেবা পান না।

অসুস্থ রহিমা বেগম বলেন, উঠতে পারছি না। প্রস্রাব-পায়খানা সবকিছুই বিছানায়। এখন আমি চিকিৎসা নিচ্ছি। ‘

রহিমার স্বামী আব্দুল হাকিম বলেন, “বউয়ের পেছনে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ করেছি। কোনো লাভ হয়নি। কুড়িগ্রাম-রংপুরে গিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি। পরে কবিরাজের সঙ্গে বাঁশি বাজাতে শুরু করি। সাত দিনের মধ্যে আমার স্ত্রী হবে। চলাফেরা করতে পারব। কবিরাজের সঙ্গে আমার চুক্তি আছে, তিনি রোগ সারাবেন এবং ৩০ হাজার টাকা নেবেন।’

রাজারহাটের বটলা বাজারের কবিরাজ আবুল হোসেন বলেন, “প্রায় ২৫ বছর ধরে বাঁশি বাজাচ্ছি। অনেক রোগী ভালো আছেন। আবার অনেকে নেই। পল্লী ও হাসপাতালের (এমবিবিএস) চিকিৎসকেরা আগের মতো রোগ পান না। গরিব রোগীরা যারা। সামর্থ্য নেই কবিরাজির কাছে চিকিৎসা করাতে।’

কবিরাজের সহযোগী আবদুল আউয়াল বলেন, “আমি প্রায় ১৭-১৮ বছর ধরে ওস্তাদদের সঙ্গে কাজ করছি। এখন জঙ্গল নেই, গাছ নেই, তাই ওষুধ পাওয়া যায় না। অ্যালোপ্যাথিতে চিকিৎসা নিতে হয়। একজন রোগীর সাত দিন সময় লাগে। এক মাস পর্যন্ত রোগীর খরচ করতে হয় ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা।

আবু হানিফ নামে আরেক সহযোগী বলেন, বাঁশির সুরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় কবুতর, নারকেল, জাম্বুরা ও কলা দিয়ে সাজানো এক জোড়া কবুতর।

এখনও কবিরাজ আর ঝাড়ফুঁকে ভরসা
শ্লোক-ভাষী নৃত্যে অংশ নেওয়া পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মোনালিসা বলেন, এ জন্য আমাদের কষ্ট হলেও আমি খুশি যে রোগী ভালো আছে। ‘

সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের উত্তর নবাবশাহ গ্রামের দিনমজুর ফুলমুদ্দি বলেন, “আমার স্ত্রী লিলি বেগম কোমরে ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারিনি। তাই কবিরাজকে দেখাই। দেড় হাজার টাকা। রোগী এখন ভালো আছে।’

একই ইউনিয়নের ছড়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা ময়না বেগম বলেন, “আমার মা রাবিয়া বেগমের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়েছে। প্রথমে কবিরাজের চিকিৎসা করিয়েছি। কোনো লাভ হয়নি। এলা টাকা তুলে হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে যায়।

এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, কারো জ্বিন ধরলে ফকির নিয়ে আসে। ফকির বাটি চালিয়ে জল ফুঁকিয়ে দেয়। অনেকেই এতে ভালো। আর যাদের ভালো নেই তারা বড় ডাক্তারের কাছে যান। কম খরচের কারণে গ্রামাঞ্চলের মানুষ রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কবিরাজ বা ফকিরের ওপর নির্ভরশীল। ‘

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন ডা. মনজুর এ-মুর্শেদ বলেন, “ওষুধের ভাষায় বাঁশি বা বাঁশির কোনো ভিত্তি নেই। উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

অনেকে এই কবিরাজকে ভন্ড বলে দাবি করলেও অনেকে তাকে ভালো চিকিৎসক বলে দাবি করেন। তদের দাবি ওই কবিরাজের বাশলি ঝাড় খেয়ে অনেক রোগি ভালো হয়েছেন। ডাক্তার ফের অনেক রোগি জায়গায় বশে সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন। তবে এটি তাদের চোখের সামনে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তারা স্পষ্ট কোন মন্তব্য করতে পারেনি।

About Nasimul Islam

Check Also

দীর্ঘ ১৭ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা পিন্টু

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালাস পাওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *