জমি নিয়ে একটি গ্রামের সকল মানুষের সঙ্গে একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডে রীতোমতো অবাক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। পুলিশকে জনগণের বন্ধু বলা হলেও আজ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের হাতেই নানা অপমান-অপদস্থ হতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার সামনে এলো ঠিক এমনই একটি ঘটনা।
বগুড়ায় বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে একটি গ্রামের প্রায় সবার জীবন নরক বানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও তার স্বজনরা। গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে প্রায় সাত দশক আগে মসজিদ-মন্দিরের নামে লেখা ১১ একর জমি দখল করতে ব্যর্থ হন পুলিশ কর্মকর্তার শ্বশুর। এরপর একে একে আটটি মামলা করে অনেক গ্রামবাসীর জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। অন্য জেলায় মামলা করেও গ্রামবাসীকে হয়রানি করা হচ্ছে। মামলায় বহু নারী-পুরুষকে আসামি ও গ্রেপ্তার করায় এলাকাটি এখন কার্যত আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ অস্বীকার করলেও আদালতের মাধ্যমে জমি দখল অনিশ্চিত হতে পারে ভেবে পেশিশক্তির পথ বেছে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন তার স্বজনরা। একাধিকবার এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বগুড়া সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ডোবরিয়া গ্রামে এই জমির ইজারা থেকে স্থানীয় দুটি মসজিদ ও একটি মন্দিরের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বহন করা হয়। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, এক সময় এই জায়গাটি জমিদারদের ছিল। ৭০ বছর ধরে মসজিদ ও মন্দির পরিচালনা কমিটি কাবালা দলিলের ভিত্তিতে এসব জমি দখল করে আসছে। জমির খাজনা পরিশোধের দায়িত্ব পড়ে গ্রামের শিক্ষিত ব্যক্তি ময়েজ উদ্দিনের ওপর।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন খাজনা বাকি রেখে ওই জমি নিলামে তুলে ময়েজ উদ্দিন প্রথমে তাঁর স্বজনদের এবং পরে নিজের নামে লিখে নেন। ২০০৫ সালে ময়েজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর ওই জমির মালিকানা আসে তার নাতনি সাদিকা নাসিম বানুর নামে। গ্রামবাসীরা নিলামের বিষয়টি জানতে পেরে জমির মালিকানা নিয়ে মামলা করেন যা এখনও চলছে।
এদিকে ঘটনাস্থলে আসেন ঢাকা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আখিউল ইসলাম। তিনি সাদিকার ছোট বোন মানতাসা আলমের স্বামী। গ্রামবাসীরা জানান, আখিউলের স্ত্রী প্রায় আড়াই বছর আগে ৮-১০ জন যুবক নিয়ে ডোবরিয়া গ্রামে বিরোধপূর্ণ পুকুরে মাছ ধরতে গেলে গ্রামবাসী তাকে বাধা দেয়। মানতাসা এক যুবককে মারধর করে তার স্বামীর ক্ষমতা দেখায় এবং এক পর্যায়ে সেও পাল্টা হামলার শিকার হয়। স্ত্রীকে মারধর করায় ক্ষিপ্ত হন আখিউল।
আখিউল তখন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ ঘটনায় আখিউলের বড় শ্যালিকা বাদী হয়ে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলার কারণে পুলিশি গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনার কয়েকদিন পর মানতাসার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ডোবরিয়া গ্রামের বাসিন্দা হান্নু মণ্ডলকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানায় ডাকাতির মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। আবার ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং বিরোধপূর্ণ জমি ও পুকুরের ইজারাদার আলীউর রেজাকে ঘোড়াঘাট থানায় মাদক মামলার আসামি করা হয়।
গত ৩ আগস্ট বগুড়া সদর থানায় সহিংসতা, ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির দুটি মামলা হয়। একটি মামলায় গ্রামের ২২ জন নারী-পুরুষ এবং অন্য ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর রাতেই গ্রেফতার অভিযান শুরু করে পুলিশ। ওই রাতে ও পরদিন ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে এ অভিযোগের আলোকে ঐ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকা করে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তিনি এ ঘটনার কিছুই জানেন না। এমনকি মামলার বিষয়েও কিছু জানেন না তিনি।