স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়ে ভারতে মাঝে মাঝেই আইন করতে দেখা যায়। সেখানকার কয়েকটি রাজ্যে স্ত্রীর অধিকারকে গুরুত্ব প্রদান করছে সেখানকার আদালত। এবার ভারতের পারিবারিক আদালত থেকে দেওয়া একটি রায় প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। জানা গেছে, ভারতের গুজরাট উচ্চ আদালত স্বামী স্ত্রীর একের ওপর অন্য জনের অধিকার বিষয় বলেছে, কোনো নারী তার ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা জানাতে পারবে এবং স্বামী কোনোভাবে তার সাথে থাকার জন্য বাধ্য করতে পারবে না। এমনকি যদি আদালতের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ দিয়ে থাকে সেক্ষেত্রেও নয়। প্রথম স্ত্রীকে ইচ্ছা করলে তার স্বামীর সাথে থাকবে এবং যদি তিনি থাকতে না চান তাহলে বাধ্য করার কোনো ধরনের অধিকার স্বামী রাখতে পারবে না এমন ধরনের রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ভারতীয় একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের করা একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুসলিম আইনে বহুবিবাহ স্বীকৃত। যদিও ইসলামে বহুবিবাহকে কখনোই উৎসাহিত করা হয় না। গুজরাট হাইকোর্ট রায় দিয়েছে যে, প্রথম স্ত্রী এই কারণে স্বামীর সাথে থাকতে অস্বীকার করতে পারে।
বিচারপতি তার রায়ে বলেছেন, ভারতে যে মুসলিম আইন চালু আছে, তাতে বহুবিবাহ স্বীকার করা হয়েছে, কিন্তু কখনোই তাকে উৎসাহ দেওয়া হয়নি। স্ত্রীকে তার সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারে না স্বামী। স্বামীর সেই অধিকার নেই।
দিল্লি হাইকোর্টের সাম্প্রতিক একটি রায়কে উদ্ধৃত করে গুজরাট হাইকোর্টও জানিয়েছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কখনোই নিছক আশার বিষয় হয়ে সংবিধানে থাকতে পারে না।
বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি নীহার মেহতা রায়ে বলেছেন, দাম্পত্যের অধিকার শুধু স্বামীরই থাকবে এটা হতে পারে না। পারিবারিক আদালত কোনো স্ত্রীকে স্বামীর সঙ্গে বসবাসে বাধ্য করতে পারে না।
বিচারপতিরা জানিয়েছেন, বনাসকান্থা জেলার পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এক নারী আবেদন জানিয়েছিলেন। পারিবারিক আদালত দিয়েছিল, ওই নারীকে স্বামীর কাছে ফিরে যেতে হবে এবং স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে হবে।
২০১০ সালের ২৫ মে ওই দম্পতির বিয়ে হয়েছিল। পেশায় নার্স ওই নারী স্থানীয় হাসপাতালে কাজ করতেন। কিন্তু তার স্বামী তাকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য বাধ্য করছিলেন এবং সেখানে কাজ করার জন্য চাপাচাপি করছিলেন। এরপরই ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন ওই নারী। তিনি আবেদনে জানিয়েছিলেন, তিনি কখনোই অস্ট্রেলিয়া যেতে চাননি।
হাইকোর্ট আইন উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, কোনো ব্যক্তি কোনো নারীকে জোর করে তার সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতে পারে না। এভাবে সে দাম্পত্যের অধিকারও প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। এই নারীকেও তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার স্বামী জোর করতে পারবে না।
স্বামীর বক্তব্য ছিল, তার স্ত্রী বেআইনিভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। তাকে বুঝিয়ে বাড়ি ফেরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তারপরই তিনি পারিবারিক আদালতে আবেদন করে জানান, স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার অধিকার তার আছে। তবে তার যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
প্রসংগত, বিভিন্ন ব্যক্তিগত আইনের পার্থক্যের কারণে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় যেসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে, আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে যে, আধুনিক ভারতীয় সমাজে নারী পুরুষের অধিকার ধীরে ধীরে সমান হয়ে উঠছে। সমাজের যেসব ঐতিহ্যগত বাধাগুলি ছিল সেগুলো ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়, উপজাতি, ব/র্ণ বা ধর্মের অন্তর্গত ভারতের যুবক-যুবতীরা যারা তাদের বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করে। তারা তাদের দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন ব্যক্তিগত দ্ব’/ন্দ্বের কারণে উদ্ভূত সমস্যাগুলির সাথে ল’ড়াই করতে বাধ্য করা উচিত নয়, বিশেষত বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে। এমনটাই জানিয়েছেন সেখানকার উচ্চ আদালত।