সিরাজগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরি। তিনি একসময় একজন গৃহিণী, সঙ্গীতশিল্পী এবং স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করে সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেলেও প্রথম নির্বাচনে পরাজিত হন।
কিন্তু তারপর সোনালী ব্যাংকের পরিচালকের পদ পান এবং এই পদটি তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়। এখান থেকেই তার উত্থান শুরু হয়, যা তাকে বিশাল সম্পদের মালিক করে তোলে। দলীয় পদের পাশাপাশি ধীরে ধীরে সম্পদের পরিমাণও বাড়িয়েছেন তিনি।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হেনরী। শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে এমপি পদ অর্জন করেন। এমপি হওয়ার পর জেলার রাজনীতিতে নিজের প্রভাব বিস্তার করেন এবং মাত্র তিন মাসের মধ্যে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় করে তার স্বামী শামীম তালুকদারকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বসান।
হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ঋণ মওকুফ, চাকরির ব্যবসা, পদোন্নতি ও কর্মকর্তাদের বদলির মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জন করেন। শুধু সিরাজগঞ্জ নয়, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, পটুয়াখালী ও ঢাকায় তার বিপুল সম্পদ রয়েছে। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে গত ১৬ বছরে তার সম্পদের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে ২০০৮ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা, যা সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৮৮৪ গুণ এবং বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী ২১০০ গুণ বেড়েছে।
ডাঃ জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের সদানন্দপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ মিয়ার মেয়ে। রাজনৈতিক পরিবারের পুত্রবধূ হওয়ার কারণে তিনি আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হন।
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হন। সোনালী ব্যাংকের বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে তার নাম উঠে আসে। দুদক তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করে, যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের তার আয়কর নথিতে নিট সম্পদ ছিল ১১ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, যা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৫১ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। সিরাজগঞ্জ ও গাজীপুরে তার নামে অনেক সম্পত্তি রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু রিসোর্ট, মেডিকেল কলেজ, বৃদ্ধাশ্রম, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সম্প্রতি, তিনি সিনিয়র নেতাদের কোণঠাসা করে এবং সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। সিরাজগঞ্জে ছাত্র ও যুব কর্মীদের হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং পরে র্যাবের অভিযানে তাকে ও তার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তারা ৭ দিনের রিমান্ডে আছেন এবং রিমান্ড শেষ হবে ৯ অক্টোবর।