স্কুল প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।সে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে সমাজের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় জানা যায় সবাইকে আমন্ত্রণ করলেও আমন্ত্রণ করা হয়নি ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানকে। এতে ক্ষুব্ধ হয় ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনেরা। চেয়ারম্যান কে কেন নিমন্ত্রিত করা হয়নি এমনি প্রশ্ন ছুড়ে মারে স্কুল শিক্ষকের উপর। এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটিতে বেধে যায় তুমুল ঝগড়া। এতেই শিক্ষককে বেদম ভাবে প্রহার করে চেয়ারম্যানের লোকজনেরা। এমনই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক।
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রণ না দেওয়ায় দুই শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। ভাংচুর করা হয় মঞ্চও। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার খানমারিচ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার খান ( Monwar Khan ) মিঠুর নির্দেশে এ মারধর ও হামলা চালানো হয় বলে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকের অভিযোগ।
জানা যায়, খানমারিচ ইউনিয়নের ২৭টি বিদ্যালয়কে দুই ভাগে ভাগ করে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ উপলক্ষে শনিবার ইউনিয়নের চন্ডিপুর খেলার মাঠে ১৪টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশে বিদ্যালয়ের প্রবীণ প্রধান শিক্ষকরা সকাল ৯টায় বহিরাগত অতিথিদের আমন্ত্রণ না করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। সূত্র জানায়, সকাল সোয়া ১০টার দিকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনোয়ার খান। এ সময় শিক্ষকরা তাকে বসতে বললেও তিনি চলে যান। কিছুক্ষণ পর শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে প্রধান শিক্ষকরা খেলার মাঠের পাশে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে আলোচনা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মনোয়ার খানের নির্দেশে তৌকির, মাসুদ ও আবুল কালামসহ কয়েকজন যুবক দশমারিচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে (৫৬) বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় অন্য শিক্ষকরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তৌকির, মাসুদ ও আবুল কালামসহ ১৫ যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় এবং মঞ্চ ভাঙচুর করে। হামলায় চন্ডিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবিয়া খাতুনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। পরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মাঠ ছেড়ে দিলে কর্মসূচি বাতিল করা হয়। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চেয়ারম্যান মনোয়ার খানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তিনি অন্য নম্বর থেকে ফোন তুলে বলেন, তিনি কথা বলতে পারবেন না।
সুলতানপুর স্কুলের সহকারী শিক্ষক হাসিনুজ্জামান স্বপন বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তাদের পরামর্শে অনুষ্ঠানে বিশেষ লোকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। 30 তারিখে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান এই তুচ্ছ কারণে শিক্ষকদের মারধর করে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। বর্তমানে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনাটি জানতে পেরে থানা প্রশাসনসহ শিক্ষা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে জানানো হয়েছে এবং থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকসহ স্কুল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান আরো কিছু শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয় সাংবাদিকেরা। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি পুলিশ। এ ঘটনা সম্পর্কে চেয়ারম্যান কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি এ ঘটনার সাথে কোনোভাবেই জড়িত নয়। এলাকার লোকেরাই শিক্ষকের সাথে কথাকাটির এক পর্যায়ে এমন ঘটনা সৃষ্টি হয়।