চাঁদপুর জেলার মাতলব উত্তর উপজেলাধীন তালতলী নামক গ্রামের প্রয়াত রাজ্জাক সরকারের কন্যা মালা আক্তার দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে ছিলেন। তিনি ১৮ বছর পূর্বে জীবন-জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে যান। তিনি ভেবেছিলেন অন্যান্যদের মতো তিনিও বিদেশে গেলে ভালো কোন চাকরি পাবেন এবং অনেক টাকা রোজগার করতে পারবেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসের শিকার হন মাল আক্তার।
সৌদি আরবের রিয়াদে আবদুর রহমান নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ১৬ বছর বিনা বেতনে কাজ করে চার মাস আগে তাকে খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়।
জানা গেছে, গৃহবন্দী মালা বিনা বেতনে কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। তাই গত ৫ বছর ধরে তিনি দেশে আসবেন এমন অনুরোধ করেন মালিককে। পাঁচ বছর পর মালিক তাকে অনুমতি দেন। তবে আবদুর রহমান মালার ১৮ বছরের কঠোর পরিশ্রমের জন্য ৬০ হাজার রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯ লাখ টাকা) দিতে রাজি হননি।
দেশে আসার পর মালা আক্তার তার সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এরপর ৩ মাস আগে মতলব উত্তর উপজেলার এসি ল্যান্ড মোঃ হেদায়েত উল্লাহর কাছে সৌদি দূতাবাস থেকে মালা সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়। তিনি তথ্য দিয়ে সৌদি দূতাবাসকে মালার পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
গত মঙ্গলবার (৮ জুন) মালার অ্যাকাউন্টে রেমিটেন্স বোনাসসহ প্রায় ১৯ লাখ টাকা জমা হয়। এ তথ্য জানার পর হেদায়েত উল্লাহ মালা আক্তারকে তার কার্যালয়ে ডেকে নেন। মালা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
হেদায়েত উল্লাহ বলেন, সৌদি দূতাবাস থেকে ফোন পেয়ে আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করে মালা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছি। এরপর তার সব তথ্য সৌদি দূতাবাসে দেই। তার পাওনা টাকা নিয়ে আমি তার সাথে অনেকবার কথা বলেছি। গত ৮ জুন আমি তাদের সাথে কথা বলেছিলাম, তারা (সৌদি দূতাবাস) বলেছিল যে মালার টাকা পাঠানো হয়েছে। অনেক চেষ্টার পর তার পরিশ্রমের টাকা পেয়ে আমি খুশি। হয়তো আমার প্রচেষ্টায় সে টাকা পেয়েছে, কিন্তু এটা তার দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসনের পুরস্কার।
তিনি আরও যোগ করে বলেন যে, তার অর্থ অপব্যবহার করা উচিত নয়। আমরা চেষ্টা করব তার কষ্টার্জিত অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে।
৫২ বছর বয়সী মালা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, “আমি টাকা পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি।” সৌদি আরবের বাঙালিরা যদি আমাকে সহযোগিতা করতো, তাহলে আমি সহজে পেতাম। অসহায় হয়ে দেশে চলে আসছি। দেশে এসে অনেক যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য পাইনি। আমি অবশেষে টাকা পেয়েছি এ্যাসিল্যান্ড স্যারকে ধন্যবাদ। আমি এখন খুব খুশি। স্যার খুব ভালো মানুষ, আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক।
মালা আক্তারের ভাই খোকন সরকার বলেন, আমরা কখনো ভাবিনি আমার বোন ফিরে আসবে। দেখতে দেখতে ১৭টি বছর পার হয়ে গেছে। আমি আমার বোনকে পেয়ে খুব খুশি। আমার বোন এ্যাসিল্যান্ড স্যারের সাহায্যে তার কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পেয়েছে, তাই আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।
খোকন সরকার যিনি তার ভাই, তিনি বলেন, আমরা কোনোদিন ভাবতে পারিনি যে আমার বোন দেশে ফিরে আসবে। ১৭ বছর ধরে আমার বোন সৌদি আরবে ছিল। আমি আমার বোনকে ফিরে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। এই এ্যাসিল্যান্ড স্যারের মহানুভবতার কারণে তার কষ্ট করে অর্জন করা টাকা পাওয়া গেছে। আমরা সবাই তার নিকট চির কৃতজ্ঞ।