পৃথিবীতে অনেক মানুষ রয়েছে যারা জীবন সংগ্রামের জন্য দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কর্মসন্ধান প্রবাসে জীবনযাপন করে বছরের পর বছর। তবে প্রবাসে তারা কতটা নিরাপদ এ নিয়ে প্রশ্ন সবার। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে দেশ ছেড়ে সৌদিতে প্রবাসী জীবন যাপন কাটানো নুর নাহার নামের এক নারী। তবে সেখানে যাওয়ার পর তার সাথে ঘটে গিয়েছে অপ্রত্যাশিত অনেক ঘটনা। তারই প্রমাণ দিয়েছেন নুরুন্নাহার এর মেয়ে। নুরুন্নাহার দেশে ফেরার পর তার মেয়ের সাক্ষাৎকারে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় ছয় বছর পর দেশে ফিরেছেন গৃহকর্মী নুরনাহার। একই সঙ্গে দূতাবাসের প্রচেষ্টায় নুরনাহারের নিয়োগকর্তা সৌদি নাগরিকের কাছ থেকে ছয় বছরের বেতন-ভাতা উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ টাকা।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) নুরনাহার বাংলাদেশে তার পাওনা পেয়েছেন। নুরনাহারকে ফিরে পেয়ে আনন্দে ভাসছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা আবুল কালামের পরিবার।
২০১৬ সালে, তিনি তার মানসিকভাবে অস্থির বেকার স্বামী এবং একমাত্র কন্যাকে রেখে তার ভাগ্য ফেরানোর আশায় গৃহকর্মী হিসাবে সৌদি আরবে যান। চলে যাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দীর্ঘ ছয় বছর কেটে যাওয়ার সাথে সাথে তার পরিবার তাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয়।
অন্যদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে নুরনাহারও অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
বিষয়টি বাংলাদেশ দূতাবাসের নজরে আসলে রিয়াদের হোতা বানি তামিম এলাকা থেকে নূরনাহারকে উদ্ধার করে সেফ হোমে আশ্রয় দেওয়া হয়। তার ভালো চিকিৎসা করা হয়।
মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে তিনি বাংলাদেশে তার ঠিকানা বলতে পারেননি। এ অবস্থায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তায় পাসপোর্টে দেওয়া ঠিকানা ও ছবি পাঠিয়ে দূতাবাসের শ্রম ও কল্যাণ শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
তার বাবা আবুল কালাম জানান, নুরনাহার সৌদি আরবে যাওয়ার পর দীর্ঘ ছয় বছর দেশে কোনো টাকা পাঠাননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাসের লেবার ওয়েলফেয়ার উইং নুরনাহারের সৌদি নিয়োগকর্তাকে খুঁজে বের করে। দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ শাখার অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, শর্ত অনুযায়ী ছয় বছরের মোট বকেয়া বেতন-ভাতা বাবদ সৌদি নিয়োগকর্তার কাছ থেকে 19,36,648 টাকার সমপরিমাণ 68017 সৌদি রিয়াল উদ্ধার করা হয়েছে। কর্মসংস্থান চুক্তির।
রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের সোনালী ব্যাংক প্রতিনিধির সহায়তায় নুরনাহারের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট সোনালী ব্যাংকে তার নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।
তার সমস্ত বকেয়া উক্ত অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছর পর তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পেয়ে নুরনাহারের পরিবার আনন্দিত।
আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা আবুল কালাম। তিনি সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
দেশে ফেরার পর সংবাদ সাক্ষাৎকারে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার কথা প্রকাশ করেন নুরুন্নাহার। তিনি জানান এমন একটা পরিস্থিতি ওখানে যাওয়ার পরে সৃষ্টি হয়েছিল নিজের প্রাণ বাঁচাতে 5 তলা বিল্ডিং এর উপর থেকে ঝাপ দিয়ে ছিলাম। সেই থেকে আমার মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। এটা বলার পর নিজের জামা তুলে দুধ দেখিয়ে মেরুদন্ডের ভাঙ্গা অংশ দেখায় সংবাদকর্মীদের।