শোবিজ অঙ্গনের একজন প্রতিভাবান অভিনেত্রী সোহানা সাবা বর্তমানে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। কথায় আছে, “কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ”, আর এ কথা যেন তার জন্যই প্রযোজ্য। সোহানা সাবার ক্যারিয়ার ২০ বছরের মাইলফলকে পৌঁছালেও, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে আওয়ামীপন্থি তারকাদের বর্তমান পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ। তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ও সমালোচনা উঠছে, এবং তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ফাঁস হওয়ায় জনগণের কাছে তারা হয়ে উঠেছে তীব্র সমালোচনার পাত্র।
সম্প্রতি, সোহানা সাবার বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত তারকাদের গোপন ‘আলো আসবেই’ নামক একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের স্ক্রিনশট ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর সোহানা সাবার নামটি উঠে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই গ্রুপের সদস্য হিসেবে সোহানা ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়, আর সেই স্ক্রিনশটগুলো এখন নেটিজেনদের কাছে বিরাট তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তার বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে, এবং এতে তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে বড় প্রভাব পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে, সোহানাকে কেন্দ্র করে আরও একটি বিতর্ক দেখা দিয়েছে। গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, তার দেহব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে সোহানা সাবা বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন এবং ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টের মাধ্যমে এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য এটি করা হয়েছে। ক্যারিয়ারে এত বছর কাজ করেছি, কিন্তু কখনও এমন ভিত্তিহীন অভিযোগের সম্মুখীন হইনি।” তিনি আরও জানান যে, এ ধরনের মিথ্যা খবর তার ক্যারিয়ারকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।
অভিনেত্রী সোহানা সাবার ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০৪ সালে প্রয়াত অভিনেত্রী ও নির্মাতা কবরীর ‘আয়না’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর থেকে তিনি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার অভিনয় প্রতিভা চলচ্চিত্রে যেমন প্রশংসিত, তেমনি টেলিভিশন নাটকেও তিনি নিজেকে প্রতিভাবান হিসেবে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই মিথ্যা অভিযোগ ও স্ক্রিনশট ফাঁসের কারণে তার ক্যারিয়ারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সোহানা সাবা আরও দাবি করেছেন যে, একটি প্রতারণামূলক দল তার নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিল, আর সে কারণে তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। তবে, সেই ঘটনার পর একজন সাংবাদিক তাকে বিনা অনুমতিতে ফোনালাপ রেকর্ড করে সেই তথ্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে, যা সম্পূর্ণ আইনবিরুদ্ধ। সোহানা সাবা এই অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে, যদি আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে এই মিথ্যা সংবাদগুলো সরিয়ে না নেওয়া হয়, তবে তিনি আইনি পথে হাটতে বাধ্য হবেন।
এদিকে, ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের স্ক্রিনশট ফাঁসের ঘটনায় সোহানা সাবা ছাড়াও শোবিজ অঙ্গনের বেশ কয়েকজন নামকরা তারকার নাম এসেছে। এই গোপন গ্রুপটি রাজনৈতিকভাবে বেশ সক্রিয় ছিল, এবং আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। এর ফলে এসব তারকারা সামাজিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ছেন।
সোহানা সাবার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শোবিজ মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কিছু মহল মনে করছে, তার বিরুদ্ধে এ ধরনের বিতর্কিত অভিযোগ তার ক্যারিয়ারের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। সোহানা সাবা দুই দশকের ক্যারিয়ারে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র উভয় অঙ্গনে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আয়না’, ‘খেলাঘর’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘প্রিয়তমেষু’, ‘বৃহন্নলা’ এবং ‘ষড়রিপু’।
এই কঠিন সময় পার করে সোহানা কি আবারও নিজের ক্যারিয়ারে স্বাভাবিকভাবে ফিরতে পারবেন কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে এবং স্ক্রিনশট ফাঁসের ঘটনায় তার সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে, সেটা পুনরুদ্ধার করা তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।