বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম এবং সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্থান পেয়ছে। প্রতিবছরেই এই দ্বীপের সৌন্দর্য্য দেখতে অসংখ্য মানুষ জমায়াত হয়ে থাকে। এমনকি শুধু দেশের মানুষই নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশেরও অসংখ্য মানুষ এই স্থানটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। তবে সম্প্রতি এই দ্বীপ দিয়ে এক শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই সম্পর্কে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।
সমৃদ্ধ ‘জীববৈচিত্র্যের আধার’ হিসাবে বিবেচিত দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনের প্রবালগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে মা/রা যাচ্ছে। গত চার দশকে এ দ্বীপ উপকূল থেকে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার টন প্রবাল ও পাথর। এ কারণে ক্ষয়ের শিকার হয়ে উপকূলের বিস্তীর্ণ ভূমি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, বিশেষ করে দ্বীপের উত্তর উপকূলে সৃষ্টি হয়েছে ভাঙনের। মনুষ্যঘটিত বেশ কয়েকটি প্রভাবে দ্বীপটি পরিবেশগত এক ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হয়েছে। অবিলম্বে পরিবেশগত পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে দ্বীপটি সাগরগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। শনিবার কক্সবাজারের পেঁচারদ্বীপস্থ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বুরি) বিজ্ঞানীদের ২০২০-২১ অর্থবছরে সম্পাদিত গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের ওপর আয়োজিত এক সেমিনারে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এবং বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) অধ্যাপক ড. মো. কাউসার আহাম্মদ। প্রধান অতিথি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবেশ ও পর্যটনের উন্নয়নের মাধ্যমেই সুনীল অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে হবে। যদি আমাদের প্রাকৃতিক রিসোর্স বা সম্পদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে উন্নয়ন কখনো টেকসই হবে না। তাই প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে সরকার বদ্ধপরিকর। সেমিনারে ‘প্রবাল ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ’ শীর্ষক মূল গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর (অতিরিক্ত সচিব)।
তিনি বলেন, সমৃদ্ধ ‘জীববৈচিত্র্যের আধার’ হিসাবে বিবেচিত দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপটির প্রবালগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে মা/রা যাচ্ছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বৃহস্পতিবার পরিদর্শনকালে বিস্তীর্ণ এলাকায় মৃত প্রবাল পাথর দেখা গেছে। গত চার দশকে এ দ্বীপ উপকূল থেকে হারিয়ে গেছে হাজারও টন প্রবাল ও পাথর। এ কারণে ক্ষয়ের শিকার হয়ে উপকূলের বিস্তীর্ণ ভূমি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, বিশেষ করে দ্বীপের উত্তর উপকুলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নব্বই দশকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে তার গবেষণা ও বর্তমান গবেষণার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলেন, মনুষ্যঘটিত বেশ কয়েকটি প্রভাবে দ্বীপটি যেভাবে পরিবেশগত বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে এবং অবিলম্বে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ না নেওয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে দ্বীপটি সাগরগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশগত পুনরুদ্ধারের জন্য বুরি বিজ্ঞানীরা কয়েকটি প্রজাতি চিহ্নিত করেছেন এবং যার মাধ্যমে সেন্টমার্টিনে দ্বীপে কৃত্রিম উপায়ে কোরাল রিফ গড়ে তোলার কৌশলও অর্জন করেছেন বলে জানান মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। তিনি দ্বীপে পরিবেশগত বিপর্যয়ের জন্য প্রবাল মরে যাওয়া, আহরণের কারণে উপকূল থেকে প্রবাল ও পাথর হারিয়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন। তিনি অপরিকল্পিতভাবে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা, প্লাস্টিক ও অন্যান্য দূষণ, ক্ষতিকর পদ্ধতিতে মাছ ধরা, অতিরিক্ত মাছ ধরা ও বড় বড় জাহাজ চলাচলসহ মনুষ্যঘটিত অন্যান্য কারণেই এ দ্বীপের প্রবালগুলোর রোগাক্রান্ত হওয়া ও ম/রে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন।
প্রতিবছর এই স্থান থেকে বাংলাদেশ সরকার বিপুল পরিমানের অর্থ উপার্জন করে থাকে। তবে সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারির কবলে পড়ে এই খাতের আয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এমনকি এই দ্বীপের অস্বিত্ব নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই সংখ্যার কথা। তবে বিজ্ঞানীরা এই শঙ্কা থেকে পুনরুদ্ধারের পদ্ধতিও জানিয়েছেন।