Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / সেনাবাহিনীর সবচেয়ে কলঙ্কিত সেই অধ্যায়টি রচনা করে গেছেন জেনারেল আজিজ,খেসারত দিয়েছে ২৩৩ কর্মকর্তা

সেনাবাহিনীর সবচেয়ে কলঙ্কিত সেই অধ্যায়টি রচনা করে গেছেন জেনারেল আজিজ,খেসারত দিয়েছে ২৩৩ কর্মকর্তা

জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান তিনি। তবে তার ক্যারিয়ারে আলোচনার থেকে সমালোচনা হয়েছে সব থেকে বেশি। বলতে গেলে বিতর্ক যেন তার পিছুই ছাড়েনি এখনো। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি পলাতক মাফিয়া ভাইদের আশ্রয় দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, তার হাতেই ঘটল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরেকটি কলঙ্কজনক ঘটনা। তিনি অন্যায়ভাবে অভিবাসন হত্যার মাধ্যমে দুই শতাধিক সামরিক কর্মকর্তাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেন।

স্টেটওয়াচ এ বিষয়ে কিছু প্রমাণ পেয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জেনারেল আজিজ ২৩৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে বাধ্য করেছিলেন যারা যথাযথ প্রক্রিয়া ও অনুমোদনের কারণে কোনো কারণ ছাড়াই দেশান্তরে ছিলেন।

২০০৯ সালে বিডিআর গণহত্যা ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে কলঙ্কজনক পর্ব। বিডিআরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শুধু ৫৭ সেনা কর্মকর্তাই প্রাণ হারাননি, বহু সেনা কর্মকর্তাকে দেশের বাইরেও পাঠানো হয়েছে। তারা কিছু শর্ত সাপেক্ষে বিদেশী অভিবাসন গ্রহণ করতে পারবেন। অনেক সামরিক কর্মকর্তার আত্মীয়স্বজন বিভিন্ন দেশে বসবাস করার কারণে তাদের অনেকেই নিজের এবং তাদের পরিবারের জন্য সব ধরনের অনুমতিপত্র গ্রহণ করে বিদেশী অভিবাসন গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক জারি করা একটি চিঠি অনুসারে, ২০০৯-২০১০ সালে, সেনাবাহিনী সদর দপ্তর জাতিসংঘে চাকরি ও অনুমতি সাপেক্ষে সেনা কর্মকর্তাদের বিদেশী অভিবাসনের অনুমোদন দেয়। কিন্তু পরে ২০১৭ সালে আরেকটি চিঠি বিদেশী অভিবাসন স্থগিত করে।

এবং সর্বশেষ চিঠিতে, জেনারেল আজিজ ২০১৮ সালে যাদের অভিবাসন আছে তাদের তাদের বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যথায় সেনাপ্রধান তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। যার মানে তারা কোনো ধরনের চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত।

কিন্তু এই সেনা কর্মকর্তারা নিজেরাই বলেননি যে তাদের বিদেশী অভিবাসন দরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীই চিঠি ইস্যু করে অভিবাসন সহজতর করে। তাদের আবেদন করতে বলা হয়েছিল, আবেদন করার পর তারা অভিবাসন গ্রহণ করেছে। এবং পরে আরেক সেনাপ্রধান তা স্থগিত করেন। এই অফিসাররা সমস্ত নিয়ম অনুসরণ করে এবং প্রতিটি ক্লিয়ারেন্সের সাথে ২-৩ বছর ধরে অভিবাসন প্রক্রিয়া করে এবং ২০১৩-২০১৫ এর মধ্যে অনেক অফিসার বিভিন্ন দেশের গ্রিন কার্ড (নাগরিকত্ব নয়) পেয়েছিলেন।

আর জেনারেল আজিজ এসে অভিবাসন সারেন্ডার করতে বলেন, এর ব্যত্যয় ঘটলে তিনি নির্দেশনা দিলেন চাকরিই থাকবে না!

২০১৭ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল বেলাল একটি চিঠি দেন। আদেশ জারি করে যে এখন থেকে কোনো কর্মকর্তা অভিবাসন গ্রহণ করতে পারবে না, তবে যারা গ্রহণ করেছে তারা কোনো সমস্যা ছাড়াই তা রাখতে পারবে। অর্থাৎ, তিনি অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন, তবে যারা ইতিমধ্যে অভিবাসন করেছেন তারা থাকতে পারেন।

কিন্তু ২০১৮ সালের আগস্টে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আবার আরেকটি চিঠি দিয়ে আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়েছে যে সমস্ত সেনা সদস্য যারা বিদেশী অভিবাসন গ্রহণ করেছেন তাদের অবশ্যই বাতিল করতে হবে অন্যথায় সামরিক চাকরি ছেড়ে দিতে হবে।

একইভাবে, ফেব্রুয়ারী ২০১৯-এ, আজিজ আরেকটি চিঠি জারি করেছিল, যার অনুসারে শুধুমাত্র অফিসার নয়, তার স্ত্রী এবং ২৫ বছরের কম বয়সী সন্তানদেরও তাদের বিদেশী অভিবাসন বাতিল করতে হবে, অন্যথায় তাদের চাকরি ছেড়ে দিতে হবে।

অভিবাসীদের অনেকেরই সন্তান বিদেশে অধ্যয়নরত ছিল, কারো কারো চাকরি ছিল যা সমাপ্তির কাছাকাছি ছিল, কারো কারো পারিবারিক সমস্যা জড়িত ছিল। অন্তত ২৩৩ জন সেনা কর্মী (২০২১ সালের হিসাবে) বিদেশী অভিবাসনের এই ধরনের দুর্যোগের কারণে তাদের চাকরি হারিয়েছে। যার মধ্যে ক্যাপ্টেন থেকে মেজর জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন।

কিন্তু যারা আত্মসমর্পণ করেনি তাদের সবাইকে বহিস্কার করা হয়নি, এখনও অনেকেই আছেন যাদের বিদেশী অভিবাসন রয়েছে। যদি বিদেশী অভিবাসন-নাগরিকত্ব প্রাপ্ত অফিসাররা এখনও সামরিক বাহিনীতে চাকরি করতে পারেন, তাহলে সেই ২৩৩ জন অফিসারের অপরাধ কী ছিল? তারা কি এমন অন্যায় করেছে যে তারাই একমাত্র শিকার? আর সামরিক বাহিনীর অভিবাসন নীতি সমগ্র সশস্ত্র বাহিনীর (নৌ-বিমান বাহিনী-সেনাবাহিনী) জন্য একই হওয়ার কথা, কিন্তু কেন শুধু সেনা কর্মকর্তাদের টার্গেট করা হচ্ছে?

বিদেশী অভিবাসন আর কেউ গ্রহণ করবে না, এ ব্যাপারে নতুন নিয়ম গৃহীত হতে পারত, কিন্তু যারা সব নিয়ম মেনে অভিবাসন গ্রহণ করেছিল তাদের কেন চাকরিচ্যুত করা হলো? তারা কোন অপরাধ করেনি!

এই ২৩৩ জন অফিসারের বেশিরভাগেরই সামরিক ট্রেস চিহ্ন ৮০ এর উপরে রয়েছে। এমন অফিসারও ছিলেন যাদের ট্রেস মার্ক ছিল ৯০। একজন অফিসার কতটা স্মার্ট এবং পদোন্নতির জন্য যোগ্য তা তাদের ট্রেস চিহ্ন দ্বারা নির্ধারিত হয়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন যারা তাদের কোর্স ছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেরা অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে বিদেশীকে বিয়ে করার অনুমতি পাওয়া কর্মকর্তাও রেহাই পাননি এই মারধরের হাত থেকে!

প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ অভিবাসন নীতি পরিবর্তন এবং সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ২৩৩ সেনা সদস্যকে তাদের চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি তথাকথিত ‘শৃঙ্খলার’ নামে অত্যন্ত তুচ্ছ কারণে ৭৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেন। তবে তার পলাতক সন্ত্রাসী ভাইদের সাথে বছরের পর বছর গোপনে যোগাযোগ করে, তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং অধস্তন কর্মকর্তাদের অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে সে ‘শৃঙ্খলা’ সহ সামরিক আইনের বিভিন্ন ধারায় শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ করেছে।

বৈদেশিক অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করে চৌকস ২৩৩ জন সামরিক কর্মকর্তার অব্যাহতি ও নিজে ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গ’ করে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অজুহাতে আরও ৭৩ জনকে চাকরিচ্যুত করে মোট ৩০৬ জন সেনা কর্মকর্তাকে বাহিনী থেকে বহিষ্কার করে জেনারেল আজিজ তাদের একরকমের হত্যাই করেছেন। কিন্তু সেদিন বিডিআরের নারকীয় হত্যাকাণ্ডে ৫৭ কর্মকর্তা নিহত হন! সেদিক থেকে বলা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়টি লিখেছেন সাবেক জেনারেল আজিজ আহমেদ!

প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জেনারেল আজিজ হয়েছেন সব থেকে বেশি সমালোচিত। তার নানা ধরনের কর্মকান্ডের কারনে বার বার তিনি এসেছেন আলোচনায়। ক্ষমতাচুত্য হবার পর থেকে তার নামে নানা ধরনের সব ইতিহাস উঠে আসতে শুরু করেছে এখন।

About Rasel Khalifa

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *