গত ১৬ জুন কুমিল্লা দেবীদ্বার উপজেলায় ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা নিয়ে রীতিমতো সারা-দেশজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বক্তব্য না নিয়েই দেশের বিভিন্ন সংবাদ পত্রিকায় উল্টো পাল্টা নিউজ তৈরি করার বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা-৪ সংসদীয় আসনের সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। তবে সেদিন আসলে কি ঘটেছিল, সে বিষয়টি এবার সংবাদ মাধ্যমে নিজেই তুলে ধরেছেন এই সংসদ সদস্য নিজেই।
আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘পরিস্থিতি দেখে আমি বিব্রত। আমার বক্তব্য না নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। কিছু অপ্রাসঙ্গিক ঘটনায় আমার নাম জড়ানো হচ্ছে, এগুলো উদ্দেশ্যমূলক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্মেলন হয়নি। এমতাবস্থায় নেতৃত্ব নির্বাচন ও সংগঠনকে গতিশীল করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২১ জুলাই সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী মাস্টার ও সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ শুরু থেকেই এ সম্মেলন আয়োজনে তৎপর ছিলেন। শুধু তাই নয়, আবুল কালাম আজাদ গত ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক রানাকে ফোন করে সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মীসভা বন্ধের হুমকি দেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন, ভানী ইউনিয়নে কর্মী সভায় কেউ আসলে সে হাত-পা নিয়ে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে যেতে পারবে না।
কুমিল্লা-৪ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য অভিযোগ করে বলেন, গত ২ জুলাই সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে ফেরার পথে কুমিল্লায় উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সমর্থকরা আমার গাড়িতে বাধা দেয়। এ সময় আমার সঙ্গে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দেবিদ্বার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম মনিরুজ্জামান মাস্টারকে /হ//ত্যা/র হুমকি দেওয়া হয়।
১৬ জুনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাজী বলেন, গত ১৬ জুন জাতীয় সংসদের মেম্বারস ক্লাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এলাহাবাদ ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণাকে ঘিরে যেমন পূর্ব পরিকল্পিত উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল ঠিক তেমনই সভা ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ব্রিফিং শেষ হয়। তারপর সবাইকে শান্ত হতে বললাম। এ সময় কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ আমাকে অশ্লীল ভাষা (যা প্রকাশযোগ্য নয়) ব্যবহার করে গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে হামলা চালায়। বড় আঘাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পাই। এমন অবস্থায় নেতাকর্মীরা আমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে সে তার বুকে ঘুষি মারে। যার সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের হস্তক্ষেপে আবুল কালাম আজাদ দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী মাস্টার এককভাবে ফেসবুকে এলাহাবাদ কমিটি ঘোষণা করলে তৃণমূলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সাংসদ আরও বলেন, কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমাদের সকলের অভিভাবক। জেলা সাধারণ সম্পাদক জনাব রওশন আলী মাস্টার ও আবুল কালাম আজাদ কর্তৃক অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ এবং পরে শারীরিক নি/র্যা/তন/ অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। এছাড়া সংসদ ভবনের ভেতরে একজন সংসদ সদস্যের ওপর হা/ম/লা শুধু ঘৃণ্যই নয়, দেশের সব সংসদ সদস্যের জন্যও অপমানজনক।
সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল আরও বলেন, সংসদের এলডি হলে ঘটে যাওয়া ঘটনা তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় রীতিমতো সারাদেশ-জুড়ে শুরু হয় ব্যাপক শোরগোল। রাজনীতি করতে গিয়ে নানা ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় নেতাকর্মীদের। তাই বলে সংসদ ভবনের ভেতরে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা, কারো কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।