শেষ হয়ে গেল পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান। আর এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে সমগ্র দেশে অনেকটা ঈদের আনন্দের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুর প্রান্তে সমগ্র দেশ থেকে জড়ো হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সেখানে গত তিনদিন ধরে উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করছে। চারিদিকে শুধু সাজ সাজ রব, ঈদের আনন্দ যেন ঈদের আগেই সেখানকার মানুষ উপভোগ করছে।
এত সব আয়োজন অনুষ্ঠানের মাঝে সবাইকে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী সেখানে নেই।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী।
আর সেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আজ প্রধানমন্ত্রীর পাশে নেই। কারণ এই প্রখ্যাত প্রকৌশলী আর বেঁচে নেই। ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল ৭৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি।।
জামিলুর রেজা চৌধুরীর মেয়ে কারিশমা ফারহীন চৌধুরী তার বাবার মতোই পেশায় একজন প্রকৌশলী। বর্তমানে তিনি সুদূর যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।
বাবার ভাষ্যমতে, তিনিও পদ্মা সেতুর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ঐতিহাসিক এই দিনে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর বাবাকে স্মরণ করেন।
সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে কারিশমা ফারহীন চৌধুরী বলেন, ‘বাবা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। তার অনুপস্থিতিতে, দলের অন্যান্য সদস্যরা সেতুটি নির্মাণ করতে পেরেছিলেন, এতে নিশ্চয়ই গৌরবান্বিত হতেন তিনি। আমার বাবা বিশ্বাস করতেন যে এই মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে একমাত্র বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা নেতৃত্ব দিতে পারে, তাদের সেই যোগ্যতা রয়েছে। আর পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা—এটা দেখে তিনি নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন। ‘
প্রকল্পের শুরুতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছিলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। তখন শুধু পদ্মা সেতুই ছিল এই প্রকৌশলীর চিন্তা ও মননে।
এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে কারিশমা। তিনি বলেন, “দেশের অন্য সবার মতো আমার বাবাও প্রথম থেকেই এই প্রজেক্ট নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত ছিলেন।” এর পেছনে অনেক কারণ ছিল। প্রথমত, তিনি জানতেন এটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। দ্বিতীয়ত, একজন প্রকৌশলী হিসেবে এটা তার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং প্রজেক্ট ছিল। অনেকেই জানেন, এই প্রকল্পে অনেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বাধা ছিল। নদী শাসন, মাটির শক্তি এবং আরও অনেক বিষয়।
কারিশমা ফারহীন চৌধুরী তার বাবার সাথে প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আমার বাবার সঙ্গে পদ্মা সেতু দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমরা পুরো পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতুর অগ্রগতি দেখতে গিয়েছিলাম। তখন মনে হয় ২৯ বা ৩০টির মতো স্প্যান বসেছিল। তখন আমরা বুঝতে পারছিলাম তিনি কতটা গর্ববোধ করছেন।’
শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারেননি জামিলুর রেজা চৌধুরী। বিশ্বব্যাংকের বিলম্বে পরে সরকার নিজ উদ্যোগে সেতুর কাজ শুরু করে। তখন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কোনো খবরদারি ছিল না।
এ ছাড়া পদ্মা সেতু নিয়ে কথিত দুর্নীতির চেষ্টার সময় জামিলুর রেজা চৌধুরীর মানসিক অবস্থা এবং তিনি ভী’/ত ছিলেন কিনা সে বিষয়েও কথা বলেছেন তার মেয়ে।
কারিশমা তার বাবা প্রসঙ্গে বলেন, বাবা সেতু নিয়ে যে সময় কাজ করতেন, সেই সময় তাঁর কর্মক্ষেত্রের সমস্ত বিষয় নিয়ে সবসময় গোপনীয়তা বজায় রাখতেন। তাকে দুর্নীতির চেষ্টা অভিযোগে অভিযুক্ত করার অপচেষ্টা শুরু হলে তিনি ওই প্রকল্প নিয়ে কখনো আমাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতেন না। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন চক্রান্ত শুরু হয় সেসময় আমার বাবা প্রায় চিন্তামগ্ন থাকতেন এবং বেশিরভাগ সময়ে তাকে দেখাতো বিষন্ন।