বাবার স্বপ্ন ও দেশকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন পূরণে আরো এক ধাপ এগিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একসময় যে দেশ ছিল অনুন্নত সেই দেশ আস্তে আস্তে স্বল্পোন্নত দেশে উত্তরিত হলো। পরবর্তিতে সেই দেশটাই আজকে উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত হলো। বিশ্বসভার মাঝে জাতিসংঘের এই প্রস্তাব গ্রহন, এ এক অনন্য পাওয়া। বিশ্বের সবথেকে বড় সভায় এমন প্রস্তাব যেন বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের জন্য গর্বের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়ে জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব গ্রহণ বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বিরল সম্মান অর্জন’। তিনি বলেন, বিশ্বসভায় বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির জন্য একটা অনন্য উত্তরণ।”
রোববার প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। এদিন সৌদি পরিবহণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার সালেহ নাসের আল জাসেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সংসদ অধিবেশনে পরিদর্শনে আসেন এবং অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, তারা ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করাই এখন মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, ‘২০২০ থেকে ২০২১ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিববর্ষ এবং ২০২১ সাল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ সময়ে এই অর্জন আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। কারণ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যখন আমরা উদযাপন করছি, সেই সময়ই বাংলাদেশের এই যুগান্তকারী অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ঘোষিত ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং এরই আলোকে আমরা পরিকল্পনাগুলো পর পর নিয়েছি। সে সময় অনেকে ধারণাই করতে পারেননি বাংলাদেশের এ ধরনের উত্তরণ ঘটতে পারে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সে সময় অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হলেও বিশ্বাস ছিল তার সরকারের এই পরিকল্পিত প্রচেষ্টার একটা সুফল বাংলাদেশ পাবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই দেশটাকে তিনি চেনেন এবং জানেন যে কারণে সমালোচনায় কান না দিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেই আশু, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগিয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) ক্যাটাগরি থেকে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশের উত্তরণের ঐতিহাসিক রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। রেজুলেশনটি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে পরবর্তী ধাপে (উন্নয়নশীল দেশে) উত্তরণের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করল। যুক্তরাষ্ট্র সময় ২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রেজুলেশন গৃহীত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে বলে নয়, সর্ব ক্ষেত্রেই বিশ্বে আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট অর্জন। তিনি বলেন ‘যে যাই বলুক আমি মনে করি যত সমালোচনাই করুক বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং কাজ করে যাব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশের এই গতি যেন আর কেউ রোধ করতে না পারে। নানারকম চক্রান্ত ষড়যন্ত্র থাকবে এবং সেগুলো মাথায় নিয়েই আমাদের চলতে হবে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছি সেটা বাংলাদেশের জনগণেরই অবদান।’
তিনি বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার মাধ্যমে তাদের সেবা করার সুযোগ দেওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা জানান।
এবারের অধিবেশনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর বিশেষ আলোচনার সুযোগ প্রদানে স্পিকারকে এবং এই বিশেষ আলোচনার শুরুটা রাষ্ট্রপতির ভাষণের মাধ্যমে হওয়ায় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকেও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে জাতির পিতা এবং বঙ্গমাতাসহ সব শহিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর একরকম জোর করেই দেশে ফিরে আসার প্রসঙ্গও টানেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি এ দেশে খুনিরা মুক্ত, যুদ্ধাপরাধীরা মুক্ত এবং তারাই রাজত্ব চালাচ্ছে। আমার ছোট ১০ বছরের ভাইটিকে পর্যন্ত ছাড়েনি সেখানে আমিও রেহাই পাব না। যেকোনো সময় মৃত্যু আমার হতে পারে।
কিন্তু সেটা জেনেও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের নিয়ত নিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কারণ তার পিতার অপূর্ণ স্বপ্ন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কাজটি তাকে সম্পন্ন করতে হবে, বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, সবকিছু হারিয়ে সেই বেদনাকে বুকে ধারণ করে কেবল একটা লক্ষ্য সামনে রেখেছি ‘বাংলাদেশের মানুষ লাখো শহিদের রক্তে রঞ্জিত, এ দেশের মানুষের জন্যই আমার বাবা সারা জীবন কষ্ট করেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন, নিজের জীবনে তিনি কিছু চাননি। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, পাশে ছিলেন আমার মা, যার নিজেরও জীবনে চাওয়া-পাওয়ার কিছু ছিল না। পাশে থেকেই তিনি প্রেরণা জুগিয়েছেন, শক্তি জুগিয়ে গেছেন। সাংসারিক কোনো কাজে জাতির পিতাকে বিরক্ত করেননি। পর্দার আড়ালে থেকেই তিনি এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হতো। আমাদের দুর্ভাগ্য জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল সেই জিয়া, এরশাদ বা বেগম জিয়া কেউই দেশকে আসলে উন্নত করতে চায়নি। ক্ষমতা ছিল তাদের কাছে ভোগের বস্তু। ক্ষমতা মানে নিজের জীবনকে বিলাসব্যসনে ব্যস্ত রাখা, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে একটি এলিট শ্রেণি তৈরি করা এবং কিছু লোককে দলে টানা। কাজেই দেশের সাধারণ মানুষ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায়।
শেষ হলো সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশন : শেষ হলো একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশন। রোববার এর সমাপ্তি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনানোর মধ্য দিয়ে অধিবেশনের ইতি টানেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অধিবেশন শেষ করার আগে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ৩ জানুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণের ভিডিওচিত্র অধিবেশন কক্ষের স্ক্রিনে দেখানো হয়। এর আগে অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ দেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।
১৯৭১ এ আমাদের অর্জন ধ্বংসপ্রায় একটি দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। যে দেশকে উন্নত দেশে রুপান্তর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পুরণে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। আজকের জাতিসংঘের প্রস্তাব স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ, যেটা দেশ এবং জাতি হিসাবে বাংলাদেশের এক অনন্য সম্মান অর্জন।