নাটোরে কলেজ শিক্ষিকার সাথে কম বয়সী কলেজছাত্রের বিয়ের ঘটনাটি কিছুদিন আগে মিডিয়া জুড়ে খবরের শিরোনাম হয় এবং সেইসাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ফলাও করে তাদের অসম বিয়ের বিষয়টি নেটিজেনরা বিভিন্ন মন্তব্য ভাসায়। মিডিয়াজুড়ে তাদের সংবাদ সামনে আসার পর, তারা জানিয়েছিলেন, তারা অসম বিয়ে করলেও তারা সুখেই আছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই শিক্ষিকা না ফেরার দেশে।
তাদের বিয়ের প্রায় ৮ মাস ২ দিন পর ওই শিক্ষিকার নিথর দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহননের ঘটনা। এ ঘটনায় তার স্বামী মামুন হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রোববার (১৪ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে নগরীর বলারিপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তার নিথর দেহটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে ৩১ জুলাই তাদের বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে ফে”সবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিয়ের খবর ভাইরা’ল হয়। তাদের ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করে।
প্রয়াত শিক্ষক মোছা. খাইরুন নাহার গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় পৌর এলাকার মো. খয়ের উদ্দিনের মেয়ে ও উপজেলার খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গ্রেফতারকৃত মামুন (২২) নাটোরের এনএস সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার বিকেল ৩টার দিকে ওই শিক্ষকের স্বামী মামুন স্থানীয়দের ফোন করে বলেন, তার স্ত্রী খায়রুন নাহার গলায় ফাঁ”স দিয়ে আত্মহনন করেছেন। স্থানীয়রা ছুটে আসার পর তার বাড়ির মেঝেতে শিক্ষিকার নিথর দেহ দেখতে পায়। এ বিষয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা মামুনকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তার নিথর দেহের অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট দেয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুনকে আটক করা হয়।
মামুন হোসেনের বরাত দিয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর নাটোর সদরের বালারীপাড়ায় তাদের ভাড়া বাসায় তার নিথর দেহ পাওয়া গেছে। রাতে স্বামী-স্ত্রী একসাথে ছিলেন। রাত ২টার দিকে ছেলেটি বাসা থেকে বের হয়। দারোয়ানও সে কথা জানিয়েছেন। এক ঘণ্টা পর ফিরে এসে রুমের দরজা খোলা দেখতে পান এবং সেই সাথে খায়রুন নাহার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায়ও দেখতে পান। এ সময় কাছে ধা’/রালো কিছু না পেয়ে ছেলেটি লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ওড়না পুড়িয়ে তাকে নামিয়ে আনে।
তিনি আরও বলেন, মামুন হোসেন কেন গভীর রাতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন সেই প্রশ্নের উত্তর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে প্রয়াত খায়রুন নাহারের গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকলেও শরীরের অন্য কোথাও আঘা’তের চিহ্ন নেই।
তবে প্রাথমিকভাবে ওই শিক্ষিকা আত্মহনন করেছেন এমনটি ধরে নেয়া হলেও পুলিশের তদন্তে ভিন্ন ধরনের কিছু বিষয় উঠে এসেছে। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই শিক্ষিকার বিষয়টি জানাজানির পর কলেজ এবং তার আত্মীয়-স্বজনের নিকট থেকে মানসিক চাপে ছিলেন। তাছাড়া তার স্বামী কাজের সুবাদে বাইরে থাকতেন, যার কারণে তিনি অনেকটা হতাশা হয়ে পড়েছিলেন। সে দিক থেকেও তিনি এমন কাণ্ড ঘটাতে পারেন বলে মনে করছেন তারা।