নিখোঁজের একদিন পরেই গাজীপুরের নিমতলী হায়দ্রাবাদ ব্রিজ এলাকা থেকে নিজেদের প্রাইভেটকারের মধ্য থেকে শিক্ষক দম্পতি জিয়াউর রাহমান মামুন ও তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জলির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত বুধবার (১৭ আগস্ট) অনেক খোঁজা-খুঁজি করেও তাদের কোনো সন্ধান না পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানায় স্বজনরা। এরপর বৃহস্পতিবার ভোরে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
এরই মধ্যে এরই মধ্যে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে দেখা যায় ওই দম্পতির ফুসফুস ও কিডনিতে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। তবে তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে নমুনাগুলো রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকার সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শফি মোহাইমেন।
‘শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গ্রুপিং করে তাদের কপাল ভালো—এলাকার মানুষ এখনো শান্ত আছে। নইলে গ্রুপিং পা… দিয়ে ঢুকিয়ে দিত। তার পরও প্রস্তুত থাকো, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে এলাকার যে কেউ এ কাজটা শিগগিরই করবে। ’
ওইদিন বিকেলে চৌধুরী জাকারিয়া নামের এক ব্যক্তি ‘শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে উপরোক্ত লেখাটি পোস্ট করেন। তার এই পোস্ট ঘিরে নানা প্রশ্ন। এটা স্পষ্ট যে স্কুলে শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের কারণেই এই পদ। মামুন ও তার স্ত্রী জলির রহস্যজনক মৃত্যুর সঙ্গে এই পোস্টের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে শিক্ষক দম্পতির চাঞ্চল্যকর মৃত্যুর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও মৃত্যুর কোনো কারণ উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। রোববার বিকেল পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীসহ সাত থেকে আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ফেসবুকে দেখা গেছে, চৌধুরী জাকারিয়ার পোস্টে পাঁচজন রি-অ্যাক্ট করেছেন এবং দুজন মন্তব্য করেছেন। ধারাভাষ্যকার খলিল রহমান জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে ভাই, একটু বলুন। জবাবে চৌধুরী জাকারিয়া লিখেছেন, শিক্ষকদের বুক ধুকপুক বেড়েছে। চৌধুরী জাকারিয়ার ফেসবুক প্রোফাইলে প্রবেশ করতে গেলে ‘লক’ পাওয়া যায়। ২৫-২৬ বছর বয়সী চৌধুরী জাকারিয়াকে তার প্রোফাইল ছবি দেখে স্থানীয়রা কেউ চিনতে পারেনি।
বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান রানা জানান, বিদ্যালয়ের ইংরেজিতে ‘শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, টঙ্গী’ নামে একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। এর বাইরে কোনো ফেসবুক নেই। চৌধুরী জাকারিয়া কী পোস্ট করেছেন তা তিনি দেখেননি। পোস্টটি দেখে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিকে তিনি কখনো দেখেননি। নামটাও শুনিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত তাকে খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান মতি জানান, তিনি চৌধুরী জাকারিয়াকেও চেনেন না। তাকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা দরকার।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপরাধ) হাসিবুল আলম বলেন, চৌধুরী জাকারিয়ার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাকে খোঁজা হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশ ছাড়াও সিআইডি, পিআইবি, গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব আলাদাভাবে কাজ করছে।
এদিকে এ ঘটনায় অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছেদুর রহমান জানান, এটি একটি পরিকল্পিত মার্ডার। সেহেতু বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খুতিয়ে দেখা হচ্ছে।