গত বুধবার (১৭ আগস্ট) সন্ধা ৬ টার দিকে স্কুল থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন শিক্ষক দম্পতি জিয়াউর রহমান মামুন ও তাঁর স্ত্রী মোসা. মাহমুদা আক্তার জলি। কিন্তু রাত অনেক হলেও তাদের বাসায় না পেয়ে রীতিমতো অনুসন্ধানে নেমে পড়েন স্বজনরা। এরপরও তাদের কোনো হদিস না পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেন স্বজনরা। এরপর বৃহস্পতিবার সকলে নিজেদের প্রাইভেটকারের মধ্য থেকে ঐ শিক্ষক দম্পতির মৃ্তদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গাজীপুরে নিজ প্রাইভেট কারের ভেতর শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু নিয়ে রহস্য সাত দিন পরও উন্মোচিত হয়নি। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, ওই দম্পতিকে হয় খাদ্যের সঙ্গে কোনো বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দিয়েছিলেন অথবা গাড়ির এসির গ্যাস নিঃসরণের কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়। এ দুটি বিষয়কে সামনে রেখে চলছে তদন্ত।
শিক্ষক দম্পতির নাম একেএম জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) ও তার স্ত্রী মোসা. মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। মামুনের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার দড়ি কাঁথাল গ্রামে। তিনি টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। জলি আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। গাজীপুর মহানগরীর ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের গাছা থানার কামারজুরী এলাকায় বাস করত ওই দম্পতি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষক দম্পতি স্কুল থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর লাশ উদ্ধারের স্থান পর্যন্ত পুরো সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে পেরেছি। কিন্তু ওই সময়ের ফুটেজে বাইরে থেকে কাউকে গাড়িতে ঢুকতে দেখা যায়নি। পুলিশ দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। একটি গলো এটি হ”ত্যা’কা’ণ্ড হলে, তাদের খাবারে বিষাক্ত কিছু মেশানো হয়েছে। আরেকটি হলো গাড়ির এসির গ্যাস নিষ্কাশনের কারণে তাদের মৃত্যু। উভয় কারণ যাচাইয়ের জন্য ইতোমধ্যে কিছু আলামত ও নমুনা সংগ্রহ করে একাধিক বিভাগের বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ মৃ’ত্যুর রহস্য উন্মোচিত হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) মোহাম্মদ উলতুৎমিশ জানান, গাছা থানার বড়বাড়ীর বাগারটেক এলাকায় রাস্তার পাশে পার্কিং করা প্রাইভেটকার থেকে ওই শিক্ষক দম্পতির ম’রদেহ উদ্ধার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর শহরের মো. পরদিন শুক্রবার রাতে জিএমপির গাছা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
জিএমপির গাছা এলাকার সহকারী পুলিশ কমিশনার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তারা স্কুল থেকে বের হয়ে একটি পেট্রোল পাম্পে গাড়ির জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করে। পরে এক সহকর্মীকে ঘটনাস্থলে নামিয়ে দেন কামরুজ্জামান। তিনি সেখানকার একটি দোকান থেকে পান কিনেছিলেন। এরপর টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ ফ্লাইওভারের নিচে কিছুক্ষণ যানজটে আটকা পড়ে গাড়িটি। সেখান থেকে বোগারটেক পৌঁছাতে তাদের প্রায় ২৫ মিনিট সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে আর কাউকে ওই গাড়ি থেকে নামতে বা গাড়িতে উঠতে দেখা যায়নি। প্রাইভেট কারটি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এসে ডানে-বামে একটু ঘুরে রাস্তার পাশে থেমে যায়। গাড়ি তখনও চলছিল। পরে জ্বালানি শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে ঐ শিক্ষক দম্পতির আকস্মিক মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন পরিবার-পরিজনরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে এটি পরিকল্পনিত ‘হ”ত্যা”কাণ্ড বলে সংবাদ মাধ্যমকে দাবি করেন স্বজনরা।