বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাংলার মানুষের অজস্র ভালোবাসা নিয়ে তিনি বার বার এসেছেন এদেশের ক্ষমতায়। প্রধানমন্ত্রীর লক্ষই হলো দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করে যাওয়া আর তিনি প্রথম থেকেই সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি তার এক বক্তব্যে বলেছেন আমার ইচ্ছে ছিল বাসন্তীকে একবার দেখবো।
চিলমারির জেলেপাড়ার ‘জাল পরা’ সেই বাসন্তীকে দেখার ইচ্ছা ছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার একটি ইচ্ছা ছিল বাসন্তীকে দেখব, আমার বাবার রক্ত নিয়ে বাসন্তীদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারলো কিনা। কিন্তু আমার বাবার রক্ত নিয়ে বাসন্তীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।
সোমবার (১ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবসের স্মরণে কৃষক লীগের রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
১৯৭৪ সালে, একটি ঘটনা ঘটে যেখানে কুড়িগ্রামের চিলমারীর প্রত্যন্ত মাছ ধরা গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারের বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বাসন্তী এবং তার চাচাতো বোন দুর্গতিকে জালে ফেলা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। দৈনিক ইত্তেফায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে অভাবের কারণে মেয়েরা তাদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারছে না। পরে জানা গেল ছবিটি মঞ্চস্থ হয়েছে।
কৃষক লীগের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন, তখন আমাদের সেনাবাহিনীতে যারা মেজর ছিলেন তাদের মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যাকে তিনি মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন, যার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, আমরা সন্তানরা বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত, আমার মা তার সারা জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, আমার বাবাকে তার জীবন দিতে হয়েছে। সেই বাঙালিদের হাতে। মাকে জীবন দিতে হয়েছে, ভাইকে জীবন দিতে হয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি কখনো। এত বড় বেঈমানী, এত বড় ভন্ড কিভাবে হতে পারে।’
স্বাধীনতা-পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ৭৫ সালের আগে বারবার অপপ্রচার চালানো হতো। কামালকে ব্যাংক ডাকাত বানানো হয়। বাবার বিরুদ্ধে অপবাদ, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অপবাদ। শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও অপপ্রচার চালানো হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মানুষ ভেবেছিল কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে মরবে। যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কথা, যখন গোলায় খাবার ছিল না, যুদ্ধকালীন ফসল উৎপাদন হয়নি… বঙ্গবন্ধু ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এ সময় একসঙ্গে কাজ করে দেশ গড়তে না পেরে শুরু থেকেই সমালোচনা শুরু হয়। নগদ অর্থ দিয়ে কেনা খাদ্য জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছাতে দেয়নি আমেরিকা। উত্তরবঙ্গে দুর্ভিক্ষ ছিল আজীবন। দুর্ভিক্ষের চেয়েও বেশি প্রচার হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাসন্তী নামের একটি মেয়ের জাল পরিয়ে ছবি তুলে সারা বিশ্বে প্রচার করা হয়। কিন্তু তখন শাড়ি পাওয়া যেত ১০-১২ টাকায়। মাছ ধরার জালের দাম দেড়শ টাকার কম ছিল না। ইত্তেফাকের এক সাংবাদিক ও উত্তরবঙ্গের এক সাংবাদিক ছবিটি তুলেছেন। তারা দুজনেই মারা যান। ডুবে মারা যান উত্তরবঙ্গের মোনাজাত উদ্দিন। আর ইত্তেফাকের ওই গাড়ির চালকের হাতে নিহত হন। এই ছবি নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানান কথা। একই সময়ে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ছাত্রলীগ ছেড়ে নতুন সংগঠন গড়ে তোলেন। তারা দুই সপ্তাহের জন্য সব জায়গায় লোক পাঠিয়ে কী করতে হবে তার পরিকল্পনা করে এসব অপপ্রচার ছড়িয়ে দেয়। এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। এত কিছুর পরও যখন তারা দেখলেন বঙ্গবন্ধুকে জনগণের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যাবে না, তাকে মুছে ফেলা যাবে না… তখন তারা তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে। জাতির পিতা যখন দেশকে স্বাবলম্বী করার পদক্ষেপ নেন, চালের দাম নেমে আসে তিন টাকায়… জনগণের মধ্যে শান্তি ফিরে আসে… তখন ঘাতকদের ষড়যন্ত্রকারীরা বুঝতে পারে যে, তিনি তা বাস্তবায়ন করলে তিনি। ক্ষমতা থেকে সরানো হবে না। ১৫ আগস্ট যখন তারা কঠোর আঘাত করে তখন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ফিরে আসার পর সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি। দেশে ফিরে আসার পর যে দুর্ভিক্ষের জন্য বাবাকে দায়ী করা হয়েছিল, সেসব জায়গায় প্রতি বছর দুর্ভিক্ষ দেখেছি। আওয়ামী লীগের পক্ষে দৌড়েছি, সহযোগিতা করেছি। আমি বসন্তকে দেখতে চেয়েছিলাম আমার বাবার রক্ত, আমার মায়ের রক্ত, ভাইদের রক্ত বসন্তীর ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে কিনা। আমি চিলমারীতে তিন মাইল কাদা-পানি ঘোরাঘুরি করে বাসন্তীর বাড়িতে গিয়েছিলাম কারণ আমি দেখতে চেয়েছিলাম ১৫ আগস্টের অপবাদ দিয়ে তারা দেশে কী পরিবর্তন এনেছে। আমি বাসন্তীকে ছেঁড়া কাপড় পড়ে থাকতে দেখেছি। তার মা অসুস্থ। পুরানো শেডের নিচে পড়ে আছে। এটাকে বাড়ি বলা যাবে না। মাছি গুঞ্জন করছে। আমার বাবার রক্তে বাসন্তীদের ভাগ্য বদলায়নি। তাহলে কেন তাকে হত্যা করা হলো? এদেশের মানুষ রয়ে গেছে শোষণ-বঞ্চনার শিকার। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চোর-ডাকাত বানিয়েছে। দেশের মানুষের জন্য কী করা হয়েছে সেটাই বড় প্রশ্ন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মানুষের জন্য যা করেছেন তা বাংলার মানুষ কোনদিনও ভুলতে পারবেনা। তিনি এক এক করে মানুষের স্বপ্নগুলো পূরণ করছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে চ্যালেঞ্জ নিয়ে সব ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নতির শিকরে।