গত ১৭ জুন অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ধ’র্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে। ওই দিন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় ওরফে বাপ্পি রায় তার সামাজিক মাধ্যমের আইডিতে বিজেপি এক নেত্রীর ছবি দিয়ে পোস্ট করেন, প্রণাম নিও বস ‘নুপুর শ’র্মা’ জয় শ্রীরাম। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে মুছে দিতে বলেন।
নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে অপমানের ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে পরিবার। অধ্যক্ষের ৩ মেয়ে এখনও ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়। বড় মেয়ে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী শ্যামা রানী বিশ্বাস বলেন, যেখানে আমার বাবা বাড়িতে আসা নিরাপদ মনে করেন না। এই মুহূর্তে সেখানে কলেজে যাওয়া কতটা নিরাপদ তা প্রশ্নবিদ্ধ। এখনও ১০০% নিরাপদ বোধ করছেন না; তাই আমরাও ঘর থেকে বের হই না। এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে আমার বাবার প্রতি যথাযথ সম্মান নিয়ে কলেজে ফেরার উপযুক্ত পরিবেশ থাকলেই তিনি ক্লাসে যোগ দেবেন।
তিনি আরও বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সারাদেশে মানুষ দেখেছে শত শত পুলিশ ও লোকজন সারিবদ্ধভাবে আমার বাবার গলায় জুতার মালা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, দুই হাত তুলে ক্ষমা ভিক্ষা করছে। সেই পরিবেশে ক্লাসে গিয়ে সে কীভাবে আরাম করবে? এ কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হন অধ্যক্ষের মেয়ে। একই বিষয়ে অধ্যক্ষের দ্বিতীয় মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী জুঁই বিশ্বাস ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী দোলা বিশ্বাস জানান, নিরাপত্তার অভাবে তারা প্রাইভেট স্কুলে যেতে পারছেন না। স্কুল খুললেও ক্লাসে যাওয়া হয় না। তারা ঘর থেকে বের হতেও সাহস পাচ্ছে না। তারা জানান, পরিবারের কোনো সদস্য বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে গেলে গোপনে বেরিয়ে পড়েন।
উল্লেখ্য, ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতিবেদনে বলা হয়, নড়াইল জেলার সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র তার নিজের সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট দেন। গত ১৭ জুন (শুক্রবার) রাতে নিজের আইডিতে তিনি ওই পোস্ট দেন। পরদিন ১৮ জুন (শনিবার) সকালে অভিযুক্ত ছাত্র কলেজে এলে অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে পোস্টটি মুছে দিতে বলেন। কিন্তু তিনি তা মুছে না দিলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন শিক্ষার্থীরা। এরপর অধ্যক্ষ সেই ছাত্রকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে ছাত্রকে নিয়ে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। ঘটনার সময়ে সেই খবর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতার মধ্যে তুমুল বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়।