নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রের (১৬) ক্রিকেট স্টাম্পের আঘাতে আহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার (৩৫) গতকাল মারা গেছেন। যে ঘটনায় সারা এলাকা জুড়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়। । প্রয়াত উৎপল আশুলিয়ার চিত্রশাইলের হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন এবং প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানও ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
এবার ঘটনা সূত্রে জানা গেল কেন তার সাথে এমন অবিচার করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠনের কয়েক জন শিক্ষকের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন.
শাসন করতে গিয়ে খুন!
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড ইউনিভার্সিটির দশম শ্রেণির এক মেধাবী ছাত্র কয়েকদিন আগে এক ছাত্রকে ঠাট্টা করে। উৎপল তখন ছাত্র শাসন করেন। এর জের ধরে শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন তিনি।
কি হয়েছিল সেদিন
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার হাজী ইউনুস আলী কলেজ অ্যান্ড স্কুলের মাঠে মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। সে সময় মাঠে খেলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন উৎপল। দুপুর আড়াইটার দিকে। মি., স্কুলের মেধাবী ছাত্র সবার সামনে ক্রিকেটের লাঠি নিয়ে উৎপলের মাথায় ও পেটে আঘাত করতে থাকে। ব্যাপারটা বোঝার আগেই উৎপল রক্তাক্ত হয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় মহিলা ও শিশু কেন্দ্র হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পেটের অস্ত্রোপচার করা হয়। শরীরে ১৬ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উৎপল না ফেরার দেশে চলে যান।
হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, “আমাদের স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। দুপুরে হঠাৎ ছাত্রীটি এসে মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক উৎপলকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ক্রিকেট। মাস্টারের মাথায় স্টাম্পের আঘাত লেগেছে।’
অধ্যক্ষ বলেন, উৎপল স্যার স্কুলের শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি ছাত্রদের বিভিন্ন সময়ে তাদের চুল কাটতে বলা সহ বিভিন্ন আচরণ সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেন। তিনি একাধিক অপরাধের বিচারও করেছিলেন। হয়তো কোনো কারণে ওই শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ছাত্রটি।
হামলার আগে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী বলেন, হামলার পর আমি বুঝতে পারি যে ছাত্রটি ইতিমধ্যেই বিদ্যুতের প্রধান সুইচ বন্ধ করে রেখেছে যাতে ভিডিওটি টিভির সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা না যায়।
পারিবারিক প্রভাব কাটিয়ে উঠবে
মেধাবী ছাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক হাজী হযরত আলীর ভাগ্নে উজ্জ্বল হাজীর ছেলে। সে স্কুলের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। হামলার পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করলেও তার পরিবার তাকে উদ্ধার করে। এরপর ওই ছাত্রকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। গতকাল চিত্রশাইল এলাকায় তার বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাসহ কাউকে পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনায় ওই আসামীর দৃষ্টান্ত মূলক শাশ্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীর অনেকেই। এছাড়া ছাত্র ছত্রীরাও এতে সমর্থন দিয়েছেন।