সৈয়দা সুলতানার বিরুদ্ধে হলের শিক্ষার্থীরা নানা অভিযোগ তোলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুহাসিনী দাস হলের প্রভোস্ট ড. বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সুহাসিনীর কারাগার থেকে কথা’ শিরোনামে একটি ফেসবুক পোস্টে প্রভোস্টের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের কথা লিখেছেন হামিদা আক্তার নামে এক ছাত্রী, যা ওই হলের শতাধিক শিক্ষার্থী শেয়ার করেছেন।
এদিকে হলের একটি নোটিশে এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। নোটিশের একটি অংশে বলা হয়, রান্না করে হল থেকে কোনো খাবার বাহিরে পাঠানো এবং বাহিরে থেকে পার্সেল করে দুপুর ও রাতের খাবার হলে আনা যাবে না।
হামিদা আক্তার নামের ওই শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে লিখেন, হলের বাহির থেকে সকল ধরনের খাবার অর্ডার করে আনায় রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। মেয়েরা হলের ডাইনিং এর খাবারের বাহির থেকে অর্ডার করা কোনো খাবার খেতে পারেন না। এদিকে সম্পূর্ণ হলে রান্নার জন্য মোট চুলা রয়েছে চারটি। হলে অবস্থানকারী ২৯০ জন শিক্ষার্থীর জন্য যা অপ্রতুল। পার্শ্ববর্তী শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের মতো প্রতি ফ্লোরে একটি করে নতুন চুলা চাইলে প্রভোস্ট তার জবাবে বলেন, তাহলে তোমরা পাশের হলে চলে যাও। নয়তো বাহিরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাক।
এদিকে সুহাসিনী দাস হলে কোনো কমনরুম না থাকায় হলের ছাদে শিক্ষার্থীরা তাদের অবসরে আড্ডা গল্পে কিছুটা সময় কাটাতে চাইলে সেখানেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন হল প্রভোস্ট। প্রভোস্টের পক্ষ থেকে আরও দোষারোপ করা হয়েছে যে ছাদে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের কথা আর গানের সুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের অসুবিধা হয়। উল্লেখ্য, হলের পাশেই উপাচার্য বাংলোতে অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা।
ফেসবুক পোস্টে আরো বলা হয়, একজন প্রভোস্ট এর দায়িত্ব হওয়া উচিৎ হলে মেয়েরা ভালো আছে কিনা তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এখানে আমাদেরকে ভালো রাখার নামে নিত্যনতুন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তাদের অনেকে হলের প্রভোস্ট এর নামে নানা কারণে তাদের সাথে বাজে ব্যবহারের অভিযোগ আনেন। পাশাপাশি হলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রহরীও তাদের সাথে নানা সময় খারাপ ব্যবহার করেন বলে জানান।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রতিনিয়তই সুহাসিনী দাস হলের মেয়েরা ব্যক্তিগত জীবনে কি করবে তার কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে হল প্রভোস্টের নিকট। যা একদমই দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য একটি ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব নিয়ম দেয়া অর্থহীন। বাহির থেকে খাবার অর্ডার করে খাবার আনার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হল কর্তৃপক্ষ। আমরা এই ভিত্তিহীন নিয়মের শেষ দেখতে চাই। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের মেয়েদের ছাদে যাওয়া নিয়ে মাথাব্যাথা থাকতে পারে তা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে বুঝতেই পারতাম না।’
এ বিষয়ে সুহাসিনী দাস হলের প্রভোস্ট ড. সায়েদা সুলতানার সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘মেয়েদের হলের ছাদে ওঠা নিয়ে আগে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাদের অনেক দিনের অভিযোগের ভিত্তিতে এখন ছাদের গেইট উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। আর খাবারের ব্যপারটা হচ্ছে মেয়েদের হলের ডাইনিং ব্যতিত বাহিরের অন্য কোনো পার্মানেন্ট মিল ব্যবস্থা চালু না করার ব্যাপারে আমরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি তবে ওকেশনালি বাহির থেকে খাবার আনায় কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।
তাছাড়া হলে অবস্থানরত অনেক শিক্ষার্থীর সাথে নানাবিধ কারণে বাজে ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুহাসিনী দাস হলে অবস্থানরত প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী আমার মেয়ের মতো। তাদের নিরাপত্তা ও ভালো থাকার কথা চিন্তা করে হয়ত অনেক সময়ই আমাকে কড়া ভাষায় কথা বলতে হয় তবে সেটা নিতান্তই তাদের ভালোভাবে থাকার জন্য করা শাসন ছাড়া আর কিছুই না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাহিরের খাবার আনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কেননা রাত এগারোটার দিকে বাহিরের একজন ডেলিভারীম্যান মেয়েদের হলের সামনে এসে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করতে পারে। যা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা যদি বাহিরের খাবার খেতে চায় তাহলে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই খাবার নিয়ে আসুক। আর প্রভোস্টের বিরূদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা হাতে গোনা মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষার্থীর কাজ। তবে প্রভোস্ট অবশ্যই অল্প কিছু শিক্ষার্থীর মর্জি মোতাবেক চলবে না। উনার সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ও জীবনমান নিয়ে চিন্তা করতে হয়।