Thursday , September 19 2024
Breaking News
Home / International / সুর বদলাল ইইউ, বাংলাদেশের সঙ্গে চায় নতুন চুক্তি

সুর বদলাল ইইউ, বাংলাদেশের সঙ্গে চায় নতুন চুক্তি

ইউরোপের ২৭টি দেশের জোট বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা-ইইউ ২২ বছরের পুরনো সহযোগিতা চুক্তির বাইরে নতুন চুক্তি করার কথা ভাবছে। উভয় পক্ষই সম্পর্ককে একটি নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুব শীঘ্রই একটি অংশীদারি ও সহযোগিতা চুক্তি (পিসিএ) নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। চলতি মাসে (ফেব্রুয়ারি) ব্রাসেলসের পিসিএ চুক্তির খসড়া ঢাকায় পাঠানোর কথা রয়েছে। পিসিএ চুক্তি স্বাক্ষরের আগে দুই পক্ষের খসড়াটি নিয়ে বছরজুড়ে ধারাবাহিক বৈঠক করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মার্চে ব্রাসেলসে খসড়া চুক্তির প্রথম বৈঠক।

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, অতীতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুশাসন কিংবা নির্বাচন নিয়ে ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কিছুটা অস্বস্তি ছিল। ঢাকার কূটনৈতিক তৎপরতায় সেই অস্বস্তি কেটে গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সরব অবস্থানের জানান দিলেও শেষ মুহূর্তে একেবারে নীরব ছিল। শুধু তাই নয়, নির্বাচন পরবর্তী বিবৃতিতে বড় সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না আসায় দুঃখ বা হতাশা প্রকাশ করলেও নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। বরং নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার বার্তা বিবৃতিতে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে ইইউ। ব্রাসেলসের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, চলতি মাসে পিসিএ চুক্তির খসড়া ঢাকার কাছে পাঠানোর কথা রয়েছে। পিসিএ চুক্তি সইয়ের আগে খসড়া নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে চলমান বছরজুড়ে আলোচনা হবে। আগামী মার্চে ব্রাসেলসে এই খসড়া নিয়ে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেও ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপালোনি নেতৃত্ব দেবেন। পরের বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। চলমান আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পিসিএ চুক্তির আগে খসড়াটি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বছরজুড়ে কমপক্ষে পাঁচটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ড. হাসান মাহমুদ। ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি গত ১৭ জানুয়ারি নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রদূত গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পিসিএ চুক্তির বিষয়টি উত্থাপন করেন। রাষ্ট্রদূত ওয়াইলি বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে আমাদের (ঢাকা-ইইউ) সম্পর্কের একটি ধাপ পরিবর্তন হবে, যা নতুন অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে চালিত হবে। এবারের অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তিতে সম্পর্কের ধরন হবে ২০০১ সালে হওয়া চুক্তির তুলনায় অনেক বেশি রাজনৈতিক। যেখানে ২০০১ সালের চুক্তি অনুযায়ী সম্পর্ক ছিল মূলত উন্নয়ন ও সহযোগিতাকেন্দ্রিক। ঢাকার একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশ ২০০১ সালে ইইউর সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে অর্থনীতি, উন্নয়ন, সুশাসন বা মানবাধিকারের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অবস্থান আগের চেয়ে শক্তিশালী। সবাই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চায়, আগ্রহ প্রকাশ করে। ইইউ এবং বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। তারা বাংলাদেশকে ভূ-রাজনীতি, নিরাপত্তা সমস্যা এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো ইস্যুতে জড়াতে চায়। বাংলাদেশও ইইউর সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী।

জ্যৈষ্ঠ এ কূটনীতিক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫-২৬ অক্টোবর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশন আয়োজিত প্রথম গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফর বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর হওয়া দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই শীর্ষ নেতা যৌথ বিবৃতি দেন। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের সদর দপ্তরে একটি চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কমিশনের ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট তার বিবৃতিতে বলেছিলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আমরা একটি দৃঢ় অংশীদারত্ব গড়ে তুলেছি এবং এখন আমরা এটিকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাচ্ছি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে উভয়পক্ষ সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে নিতে আলাপ-আলোচনা করছে। অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে উভয়পক্ষ কাজ করছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, “ইইউ বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও ইইউর বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারাটা আমাদের জন্য খুব জরুরি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইইউর এখানে আগ্রহের যথেষ্ট কারণ আছে। তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ দুই ইস্যুতে জোটের কিছু সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে কিছু টানাপোড়েন ছিল। কিন্তু সেটা কূটনৈতিক তৎপরতায় বা যে কোনো উপায়ে সরকার ম্যানেজ করতে সক্ষম হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় জরুরি হচ্ছে, বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক অংশীদারিত্ব পর্যায়ে উন্নীত করা।’ গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপালোনি একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকা সফর করেন। ওই সফরে পামপালোনি পররাষ্ট্র-বাণিজ্য ও শ্রম সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন।বৈঠকে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও ইইউর বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধার পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বাংলাদেশ ইইউকে বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তৈরি পোশাক খাতের পণ্য বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে থাকলে তার কোনো মানে হবে না। পোশাক খাতকেও শুল্কমুক্ত (জিএসপি প্লাস) সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এছাড়া শ্রমিক ইস্যুতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার নয়টি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আলোচনা হয়। ঢাকা থেকে ইইউকে জানানো হয়, কর্মপরিকল্পনার প্রায় ৮০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। ইইউ প্রতিনিধি দল ইইউ শ্রম আইন স্থাপনের বিষয়টি উত্থাপন করেছে। ঢাকার পক্ষ থেকে ইইউকে জানানো হয়- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ নভেম্বর ঢাকায় প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপ করে বাংলাদেশ-ইইউ। ওই সংলাপে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. শাহরিয়ার আলম। অন্যদিকে ইইউর পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিক মোরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইইউর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিক মোরা ২০২২ সালের অক্টোবরের শেষে ব্রাসেলসে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দেখা করেন। সে সময় রাজনৈতিক সংলাপের সিদ্ধান্ত হয়। পরে গত বছরের ২৮ জুন ঢাকায় সংলাপের তারিখ চূড়ান্ত হয়। কিন্তু ইইউর কারণে শেষ মুহূর্তে সংলাপ হয়নি। পরে গত বছরের ২৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ও ইইউর যৌথ কমিশনের দশম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

About Nasimul Islam

Check Also

বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিতে বড় পতন

বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিতে বড় পতন হয়েছে। শুধু আগস্টেই রপ্তানি কমেছে ২৮ শতাংশ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ভারতের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *