তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, তাঁরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। আর তা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী এ সরকারের অধীনেই সম্ভব। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি ২০০ থেকে ২৫০ আসনে ভোট করবে। বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা মাঠে নামলে জনগণ সাড়া দেবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি তাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করতে পারে তাহলে অবশ্যই সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন সম্ভব। দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তৃণমূল বিএনপি সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছে।
নতুন দলে যোগ দেওয়ার কারণ সম্পর্কে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, তৃণমূল শব্দটা আমার কাছে খুব পছন্দ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ করেছে তৃণমূলের মানুষ। আজকে বাংলাদেশের তৃণমূলের মানুষ বঞ্চিত, তাদের মূল্যায়ন হয় না। আমি চেষ্টা করব তাদের কথা বলতে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনোরকম প্রভাব বিস্তার করা যাবে না। সব নির্বাহী ক্ষমতা তাদের হাতে থাকতে হবে।
জনপ্রশাসনসহ অন্যান্য প্রশাসন যদি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে তাহলে অবশ্যই এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তৃণমূল বিএনপিতে উল্লেখযোগ্য আরও কেউ যোগ দিচ্ছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং এখনো করছেন। আমাদের নীতি ও আদর্শে সাড়া দিয়ে অনেকে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেবেন। দেশের সামগ্রিক অবস্থা কেমন, কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে।
তবে যে কটি বিষয় জনগণকে আঘাত করেছে তার অন্যতম হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আজকে আমরা পর্যাপ্ত আলু উৎপাদন করলেও আমদানি করতে হচ্ছে। সরকার যদি মজুদদারদের সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলবে। আমি বিশ্বাস করি, সিন্ডিকেটগুলো চাপে রাখার শক্তি সরকারের আছে। যদি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় সে ক্ষেত্রে সরকার সমস্যায় পড়তে পারে। আমি মনে করি, সরকারের হাতে এখনো সময় আছে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই নতুন নতুন দলের সৃষ্টি হয়, তৃণমূল বিএনপিও সে রকম দল কি না- জানতে চাইলে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, দেশে কিংস পার্টি বলতে কিছু নেই। ১/১১-এর সময় কয়েকটি দল কিংস পার্টি নামে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তৃণমূল বিএনপি জনগণের পার্টি। আমরা মানুষের কথা বলব। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই। আমরা স্বাধীনভাবে এবং মুক্ত চিন্তাধারায় কাজ করছি। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদাই প্রথম দিয়েছিলেন। যে কারণে তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এখন ঘুরেফিরে তারা এ জায়গায় এসেছে।
আমি মনে করি তাদের কিছু দলীয় কর্মী ছাড়া জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেবে না। শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, রাজনীতির নামে আর মানুষ হত্যা দেখতে চাই না। বাস-ট্রাক পোড়ানোর সহিংসতাও দেখতে চাই না। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তিনি বলেন, দেশে যখন ৭ কোটি মানুষ ছিল তখনো সংসদীয় আসন ছিল ৩০০, এখন ১৭ কোটি মানুষ। তবু সংসদীয় আসন বাড়েনি। আমি মনে করি প্রতিটি উপজেলা থেকে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে হবে। এ ধরনের সুপারিশ তৃণমূলের ইশতেহারে থাকবে।