বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলনকে জোরদার করতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে থেকে একটি বার্তা দেয়া হয়েছে, যেটা বাস্তবায়ন করতে নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিএনপি, আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের মাঝে সংঘ’র্ষের ঘটনা ঘটেছে। যেটা বিএনপির সক্রিয় হয়ে ওঠার একটি উদাহরণ। এদিকে বিএনপি যেকোনো মূল্যে সরকারকে উৎখাতের জন্য কাজ করে ডাক দিয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে। বিএনপি’র একমাত্র শক্তি হচ্ছে জনগণের ঐক্যবদ্ধতা, এই শক্তি ছাড়া তারা বিকল্প কিছু দেখছে না।
উত্তরের জেলা শেরপুরের বিএনপি নেত্রী সানসিলা জেব্রিন প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে একতরফাভাবে নির্বাচনের দাবিতে তাদের রাজপথে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে হবে- এই একটি বার্তা তারা এখন দলীয় কেন্দ্র থেকে পেয়েছেন।
শেরপুরে বিএনপির এক নেতা বলেন, দল যে কর্মসূচি দিচ্ছে তাতে অংশ নিয়ে মাঠে অবস্থানকে শক্তিশালী করাই এখন দলের একমাত্র বার্তা। অন্যান্য জেলা রাজশাহী, বগুড়া, যশোর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও খুলনা থেকে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয়।
তাদের বক্তব্য, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতা ও মামলা-মোকদ্দমা বা পুলিশি হয়’রানির ভয়কে উপেক্ষা করে নানা ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামছেন। তারা মনে করেন, দেশে জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং সরকার কিছুটা সমস্যায় পড়েছে।
এ সুযোগে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এখন কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দাবি করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী আওয়ামী লীগের একটানা শাসনামলেও বিএনপি ঐক্যবদ্ধ থাকার বিষয়টিকে দলের বড় শক্তি বলে মনে করেন।
দীর্ঘদিন ধরে টালমাটাল অবস্থায় থাকা বিএনপিতে কোনো ভাঙ্গন না পাওয়ায় দলের মাঠ পর্যায়ের নেতারা এখন মাঠে সক্রিয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। “দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য ব্যস্ত। তাই বিএনপির পক্ষে আন্দোলন করা সহজ হবে,” বলেন অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।
বিভিন্ন জেলায় বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, তাদের একটি বড় অংশ অন্য দলের সঙ্গে একযোগে আন্দোলনের পক্ষে নয়, তারা বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ বা প্লাটফর্মের মাধ্যমে জোরালো আন্দোলনের পক্ষে।
বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তারাও একই মত পোষণ করেন। তবে দলটির মূল নেতৃত্ব এই মুহূর্তে তাদের জোট বাস্তবায়নের পক্ষে নয়। তারা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে একযোগে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাদের বক্তব্য হলো, যেসব ডান ও বাম দল বিএনপির দাবির সঙ্গে একমত হয়েছে, সেসব দল নিজেদের অবস্থান থেকে বিএনপির সঙ্গে আলাদাভাবে অথবা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জোট করে একই কর্মসূচি পালন করবে।
আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, রেজা কিবরিয়া, নুরুল হক নূর, জোনায়েদ সাকির মতো নেতাদের নেতৃত্বে সাতটি দল ইতোমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ নামে একটি জোট গঠন করেছে।
এদিকে বিএনপির সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি জোট মাঠে নামার কথা বলেছে। অন্যদিকে ইসলামী দল বিএনপি নেতৃতাধীন জোট থেকে সরে গেলেও বিএনপির সাথে একাত্ম হয়ে মাঠে নেমে সরকারকে হঠাতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তবে বিএনপিসহ জোটের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে নামলে আওয়ামী লীগ কী ধরনের ভূমিকা গ্রহণ করবে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে দলটির নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না।