ঠিক পাঁচ বছর আগের কথা। 2018 সালের 30 ডিসেম্বর, নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এক মহিলা জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তার পছন্দের দলকে ভোট দেওয়ার জন্য গণধর্ষণের শিকার হন। চরজুবিলী ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একদল তাকে ধর্ষণ করে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার পায়নি নির্যাতিতা। এখন ভোট এলেই আতঙ্কে রয়েছেন ওই নারী ও তার পরিবার।
সম্প্রতি নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা খুব ভয় পাচ্ছি। কোনো নির্বাচন আসলে ভয়ে কাজ করে না। আবার কোনো হুমকি আছে কিনা জানি না। কেউ ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে বলেছেন।
এই নারী বলেন, তিনি কোনো রাজনীতি করেন না। কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিলেন না। তিনি শুধু বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ পছন্দ করেন। তাই ওই প্রতীকে ভোট দিতে গিয়ে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।
ধর্ষণের ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে সুবর্ণচরের চরজব্বার থানায় মামলা করে। মামলায় তৎকালীন ইউপি সদস্য রুহুল আমিনসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একজন অভিযুক্ত এখনও পলাতক।
মামলার অবস্থা জানতে চাইলে আইনজীবী মোল্লা হাবিবুর রসূল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এরই মধ্যে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়েছে। ১৭ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করা হবে। মামলায় আসামিরা সরাসরি দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আদালত এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক রায় দেবেন।
কি হয়েছিল সেদিন
2018 সালের 30 ডিসেম্বরের ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী বলেন, 29 ডিসেম্বর বিকেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিন এলাকার সবাইকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পরের দিন ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে ওই নারীও ভোট দিতে যান। ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাকে ভোট শেষ বলে বাড়িতে যেতে বলেন। তিনি বলেন, “আমি এত কষ্ট করে টোকেন খুঁজে পেয়ে ভোট দিতে আসছি। আমাকে ভোট দিতে হবে। একথা বলার পর যুবকরা আমাকে ভোট দিতে দেয়। তারপর আমি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখি, একটি ব্যালট পেপার রাখা হয়েছে। হাতিয়ার। গোপন কক্ষও ছিল না। আমি ব্যালট হাতে নিয়ে ধানের শীষে সিল মেরেছি। তারপর তারা আমার ব্যালট পেপার ভাঁজ করতে চায়। আমি তা না করে বাক্সে যুদ্ধ ছেড়ে দিচ্ছি।
ওই নারী আরও বলেন, রুহুল আমিন ও তার সঙ্গে থাকা যুবকরা ওই সময় তাকে দুটি আঙুল দেখিয়ে কিছু ইঙ্গিত করেছিল। বিকেলে ভোট শেষ হতে না হতেই তারা ঘরে ঢুকে স্বামী ও ছেলেকে বেঁধে ফেলে। পরে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।