আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক ভাবে করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে রাজনৈতিক দলসহ দেশের সুশীল সমাজের সাথে আলোচনা করেছে কমিশন।যদিও কোনো সংলাপে বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহন করেননি। তারা নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অনড় কিন্তু এটি রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের পরাশর্ম দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলের বিরোধীতার সত্ত্বেও নির্বাচনে ইভিএমের সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করা হয় বিভিন্ন মহলে। ইভিএম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নয় সামনাসামনি চ্যালেঞ্জ করুন বলে মন্তব্য করে যা বললেন (ইসি) ব্রি. জে (অব.) আহসান হাবিব খান।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ নিয়ে কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর যে কোনো প্রশ্ন, আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে চ্যালেঞ্জ না ছুড়ে সামনাসামনি কথা বলতে বলেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে (অব.) আহসান হাবিব খান।
বুধবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
২৮ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ডা. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইভিএমের অডিট কার্ড পরিবর্তন করে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব। এছাড়া আঙুলের ছাপ না মিললে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ দিয়ে ওভাররাইট করে ব্যালট ইউনিট খোলার বিষয়টিও রয়ে গেছে।
এমন অভিযোগের জবাবে ইসি আহসান হাবিব খান বলেন, ইভিএম নিয়ে আমরা জাতীয় কারিগরি কমিটি ও রাজনৈতিক দলগুলোর কারিগরি কমিটির সঙ্গে বসেছি। তাদেরও ডেকেছি। কিন্তু তারা আসেননি। আমরা পাঁচ মাস ধরে সময় দিয়েছি। কেন হঠাৎ করে এ সংবাদ সম্মেলন, উদ্দেশ্যটা কী?
তিনি বলেন, তাদের জন্য আমাদের দরজা সব সময় খোলা। তারা একদিন না দশদিন আসবে, ভয় কোথায়? যদি চ্যালেঞ্জ করতেই হয়, তাহলে সংবাদ সম্মেলন কেন? এখানে আসুন এবং আমাদের চ্যালেঞ্জ করুন। তারা অনেক শিক্ষিত, আমাদের থেকে অনেক বড়। তাহলে এখানে এসে আমাদের চ্যালেঞ্জ করতে সমস্যা কি?
নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা চারটি নির্বাচন করেছি, কতজন মা/রা গেছেন? কত জায়গায় নৈরাজ্য? কোনো অনিয়ম হলে তা তুলে ধরুন, কোনো সমস্যা নেই। অসততা, অস্বচ্ছতা, পক্ষপাতিত্ব যদি চোখে পড়ে, প্লিজ লেট মি নো। আমাকে জানান, তার প্রতিকার, জবাব দিয়ে তৃপ্ত করে ছাড়বো। কাজ করতে গেলে ভুল হতে পারে। আপনি দেখবেন ইচ্ছাকৃত ভুল হলো কি না। একটা ইচ্ছাকৃত ভুল, আরেকটা হচ্ছে অনিচ্ছাকৃত ভুল। আমাকে পর্যবেক্ষণ করেন।
তিনি বলেন, জনগণের আস্থা অবশ্যই আসবে। দলগুলোর এই অবিশ্বাস অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আসতে পারে। আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নেব। তবে ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে, এটা নিশ্চিত। আপনারাও বুঝতে পারবেন। সামনের সিটি, গাইবান্ধার উপ-নির্বাচনসহ যেখানে ইভিএম হবে সেখানেই ভোটাররা বলবে ইভিএমই ভালো। আমরা ঈমানের সাথে কাজ করে যাবো। সঠিক কাজ করে যাবো। ক্ষমা চাইবো না। ভুল করলে শুধরে নেবো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে অনেকেই আছেন যারা সংকট তৈরি করতে চান।ঘোলাভাবে শিকার করতে চান। সরকার ও বিরোধীদল থেকে অনেকেই ইভিএম চাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আমাকে ‘ইভিএম দিয়েন না, আমার এলাকার অশিক্ষিত মানুষ বেশি’ এমনও বলছে। বিদেশে থাকা সন্তানের সাথে যদি মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বলতে পারে, দুটি বোতাম চাপতে পারবে না? কাজেই এটা অসৎ উদ্দেশ্য।
ইসি হাবিব বলেন, আঙুলের ছাপ না মিললেও যখন নম্বর দেওয়া হয়, তবে ভোটারের পরিচয় মেলে। যদি আঙুলের ছাপ মেলে না, আপনি যদি এটিকে ওভাররাইট করেন তবে এটি সংরক্ষিত থাকে। আমরা প্রায়ই ভিডিও কলে এটি সম্পর্কে কথা বলি। নির্বাচনে প্রযুক্তি নিয়ে চলতে হবে। বিকাশ, রকেট, উপায়, নগদ; জুম অ্যাপ বিশ্বব্যাপী চলছে। কারো কোন প্রশ্ন বা সন্দেহ থাকলে – আমাদের কাছে আসুন, দেখুন। প্রতিটি পর্বে আমরা ইভিএম দেখার ব্যবস্থা করেছি, থাকতে বলেছি।
তিনি বলেন, কারচুপি প্রমাণ করতে পারলে আমরা সিদ্ধান্ত দেব। যেহেতু হাতের পাঁচটি আঙুল সমান নয়, সেহেতু কারোরই ভ্রান্ত উদ্দেশ্য থাকতে পারে। রিটার্নিং অফিসার নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত দলগুলো যুক্তিসঙ্গত কারণেই এই বিষয়টি উত্থাপন করেছে। কেন এটি, আমাদের আরও জানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভালো মন্দ সব জায়গাতেই আছে। যারা সততার সাথে কাজ করবে তাদেরকেই রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নেব। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও থাকবেন। সততা ও বিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করা কর্মকর্তাদের যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা যোগ্য স্মার্ট অফিসার নিয়োগ করব। এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।
প্রসঙ্গত, ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে (ইসি) পক্ষ থেকে। পেছনে নয় কিছু বলার থাকলে সরাসরি আলোচনার আহ্বান করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।