এক মাসেরও কম সময়ে ডলারের দর তিন দফায় এক টাকা কমেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকার মান ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উন্নতির সম্ভাবনা দেখছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বর্তমানের তুলনায় ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতির হার কমবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এই ডিসেম্বরে আইএমএফের দ্বিতীয় ধাপের ১.৩১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে যোগ হবে বলে আশা করছে।
দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯.১৬ বিলিয়ন ডলারে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৯.১৩ বিলিয়ন ডলার ছিলো। অর্থাৎ এক সপ্তাহে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলার।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ড. মাজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, চলতি মাসে রেমিট্যান্সসহ ডলারের প্রবাহ ইতিবাচক হওয়ার পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর ঋণও বাড়ছে।
গত বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে অনলাইন বৈঠকে ডলারের নতুন দর নির্ধারণ করা হয়। ব্যাংক এক্সিকিউটিভ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেডা) মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ২৫ পয়সা কমিয়ে নতুন ডলার লেনদেনের হার নির্ধারণ করেছে। এর ফলে সব উৎস থেকে ডলার কিনতে (সেবা খাতসহ সব ধরনের রফতানি আয়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও আন্তব্যাংকে লেনদেন) ডলারের বিনিময় হার হবে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর বিক্রির (আমদানি, আন্তব্যাংক, বিদেশে অর্থ পাঠানো) ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা।
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর ডলারের বিনিময় হার ২৫ পয়সা কমেছিল। ২২ নভেম্বর, ডলারের ক্রয়-বিক্রয় হার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বৃদ্ধির পর প্রথমবারের মতো ৫০ পয়সা কমেছে। এরপর প্রতি ডলারের বিনিময় হার ৫০ পয়সা কমিয়ে আমদানিতে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং রপ্তানি ও রেমিটেন্সে ১১০ টাকা করা হয়। অর্থাৎ এবিবি ও বাফেটের ঘোষিত হার অনুযায়ী ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
বাফেদার চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মো. আফজাল করিম ডলারের দাম কমানোর বিষয়ে বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসছে। চলতি হিসাবে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) ঘাটতি ছিল, তবে এখন উদ্বৃত্ত হয়ে গেছে। তাই ডলারের দাম বাড়ার কারণ নেই।
এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাপ কমতে শুরু করেছে। এছাড়াও আমরা একটি বার্তা পাঠাতে চাই যে অর্থ স্থিতিশীল হচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি বিতরণের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে আইএমএফ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আইএমএফের পর্যালোচনা- চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ১৯.১৩ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের অভিমত, বৈদেশিক মুদ্রার অর্থায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি অর্থবছরের শেষে থাকবে না, বরং উদ্বৃত্ত থাকবে।
আইএমএফের মতে, বেসরকারি খাতে চাহিদা কম থাকলেও তুলনামূলক ভালো রপ্তানির ভিত্তিতে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ।
আইএমএফের পরিচালকরা মনে করেন, কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও সংস্থার সঙ্গে নেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিপথে যায়নি। সংস্থাটি বাংলাদেশ সম্প্রতি যে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছে।