বদলির কারণে দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা, অবশেষে সুখবর পেতে যাচ্ছেন। বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে প্রাথমিক উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির খসড়া নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা প্রশাসন। এর ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নিজ জেলায় বদলির সুযোগ পাবেন। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশকৃত বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে কর্মরত এক লাখ ১৩ হাজার শিক্ষক পর্যায়ক্রমে নিজ নিজ জেলায় বদলির সুযোগ পাবেন।
জানা গেছে, বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত এবং ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বেসরকারি এমপিও শিক্ষকদের বদলি নিয়ে দ্বিতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালা স্থানান্তরের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মশালায় স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ৭টি শর্ত আরোপের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
কর্মশালার সূত্র জানায়, বদলির ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর সুপারিশে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিবেচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তরা বদলির সুযোগ পাবেন না। বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর বদলির বিষয়টি বিবেচনা করা কঠিন হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বদলির শর্তের বিষয়ে বলা হয়, এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা দুই বছর চাকরির পর বদলির আবেদন করতে পারবেন। পূর্বের আবেদন গ্রহণ করা হবে না। চাকরি জীবনে একবারই বদলির সুযোগ থাকবে।
বদলির কারণে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শূন্যতা তৈরি করা যাবে না। শিক্ষকের পদ শূন্য না থাকলে বদলির সুযোগ দেওয়া হবে না। এমনকি আবেদনই বিবেচনায় নেওয়া হবে না। পারস্পরিক বদলির ক্ষেত্রে উভয়ের সম্মতিপত্র থাকতে হবে। দুইজনের সম্মতিপত্র জমা দেয়ার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে একজনের সম্মতিপত্রের ভিত্তিতে পারস্পরিক বদলি দেওয়া হবে না। পারস্পরিক বদলির ক্ষেত্রে উভয়ের সম্মতিপত্র থাকতে হবে।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই পদে একাধিক ব্যক্তি বদলির আবেদন করলে এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রদত্ত মেধাতালিকা বিবেচনায় নেওয়া হবে। মেধাতালিকায় যে এগিয়ে থাকবে তাকেই বদলির সুযোগ দেওয়া হবে।
বদলি প্রক্রিয়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে হবে। সফটওয়্যারের মাধ্যমেই অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হবে। তবে এজন্য নতুন করে সফটওয়্যার তৈরি করা হবে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির জন্য যে সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে সেটি আপডেট করা হবে। এরপর ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে।
স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) দেখবে। আর মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের বিষয়টি দেখভাল করবে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। স্থানান্তরের আবেদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান বা ম্যানেজিং কমিটির অনুমতির প্রয়োজন নেই। শিক্ষকরা সরাসরি অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
বদলির আবেদন ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হবে এবং ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এই নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে বদলি প্রক্রিয়া পরিচালনার সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কোনো ক্ষতি না হয়।
কর্মশালা সূত্রে আরও জানা গেছে, নারী শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বদলির ক্ষেত্রে কর্মরত শিক্ষকের নিজ জেলার ঠিকানা, মহিলা শিক্ষকের স্বামীর কর্মস্থল, স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা বিবেচনা করা হবে।
বর্তমানে কর্মরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকের নিজ জেলার মধ্যে দূরত্বও বদলির ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া বদলির ক্ষেত্রে শিক্ষক নিবন্ধনের ব্যাচ বিবেচনায় নেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।
এনটিআরসিএ ২০১৫ সালে সেটার প্রথম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। এই নিয়োগটি ২০১৬ সালের দিকে সম্পন্ন হয়েছিল। প্রথম গণবিজ্ঞপ্তির আগে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা নিজেরাই প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করার সুযোগ পেয়েছেন। ফলে তাদের বদলির প্রয়োজন নেই। তাই এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তরাই বদলির সুযোগ পাবেন বলে বলা হচ্ছে।