শহুরে ও প্রান্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা ক্ষুদ্র ঋণ প্রত্যাশী গ্রাহকও কম নয়। তবে নিয়ম মেনে ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন না তারা। তাদের কোনো দোকান বা অফিস এবং ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র না থাকায় ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে এবার সেই প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে সরকারের ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
এই সিস্টেমে লোন পেতে কোন কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না, অফিসের প্রয়োজন হয় না। ডিভাইস এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকোনো জায়গা থেকে লেনদেন করা যায়। আর এটাই হলো ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
১৮ বছর ধরে রাজধানীর দিলকুশায় রাস্তার পাশে কাপড়ের ব্যবসা করছেন নাসিরসহ অনেকে। মৌসুমে বিক্রি বাড়লে রাজধানীতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ চাইলে খালি হাতে ফিরতে হয়। আর ব্যাংক ঋণ অধরা শর্তের বেড়াজালে ঋণের আশা হতাশায় পরিণত হয়।
নাসিরসহ অন্য ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যাংকে গেলে তাদের ঋণ দেওয়া হয় না। ব্যাংক যে নথি চায়, তা তাদের কাছে নেই। কারণ তারা ফুটপাতে ব্যবসা করে। আর ব্যাংক ঋণ দিলেও খরচ ও সময় লাগে। তাই যে কিস্তি বা সুদে ধার নিতে পারে। তারা আরও বলেন, ঋণ নেওয়ার অন্য কোনো উপায় থাকলে সেভাবেই ঋণ নেবেন।
চলতি জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে সরকার প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল ব্যাংকিং চালুর ঘোষণা দেয়। নতুন এই ব্যবস্থায় কোনো অফিস, শাখা ও আলাদা অবকাঠামো থাকবে না। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতোই, ডিজিটাল ব্যাংকের প্রতিনিধিরা এলাকাভিত্তিক লেনদেনে নিযুক্ত থাকবেন। গ্রাহকরা জাতীয় পরিচয়পত্র সহ তাদের নিজস্ব তথ্য আপলোড করে অ্যাকাউন্ট খুলতে এবং ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। ইতোমধ্যে ১০টি ব্যাংকসহ ৫২টি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হবে ক্ষুদ্র ঋণপ্রার্থীদের সহজে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া।
নাকডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা মূলত তাদের জন্য যারা ছোট ঋণ খুঁজছেন। ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা তাদের সিঙ্গেল ডিজিট ঋণ দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা চাইলে বিনামূল্যে ঋণও দিতে পারেন। এই ব্যবস্থার সুবিধা হল: আজ যার 10,000 টাকার প্রয়োজন সে ব্যাঙ্কে যায় কিন্তু টাকা তুলতে পারে না। আপনি চাইলে ডিজিটাল ব্যাংকিং সার্ভিসে এক ক্লিকেই টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন।
নতুন এই ব্যাংকিংয়ে আমানত নেওয়া, ঋণ দেওয়া সবই হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় লাইসেন্স প্রদানে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
তবে আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, জনগণের কাছে যে আমানত আছে তা আমানতের গ্যারান্টি হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দিতে হবে। যদি তারা তা পরিশোধ করতে না পারে এবং যদি একটি ব্যাংক ব্যর্থ হয়, তাহলে কোটি কোটি মানুষের আমানত প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
তবে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই পদ্ধতি আর্থিক কর্মকাণ্ডে প্রতিযোগিতা বাড়াবে। যাচাই-বাছাই করেই অনুমোদন দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেসবাউল হক বলেন, ‘আমাদের যে নির্দিষ্ট সুদের হার আছে তাদের আওতায় আসতে হবে। আবার আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাজারে যে সুদের হার চলবে তা মেনে নিতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানও ব্যাংক। তারা আমানত নিতে পারে এবং ঋণও দিতে পারে। যেহেতু আমাদের প্রধান গ্রাহকরা প্রান্তিক গোষ্ঠী, তাই আমরা কোনো বড় ঋণ অনুমোদন দেব না।
একটি ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে ন্যূনতম 125 কোটি টাকা মূলধনের প্রয়োজন হবে। এবং এটিও জানানো হয় যে প্রতিটি উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে 50 লক্ষ টাকা মূলধন দিতে হবে।