সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিরা টাকা জমা যে পরিমান দিনকে দিন বাড়ছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়ে থাকে যেটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের দু:সংবাদও বটে। গত এক বছরে এই ব্যাংকটিতে বাংলাদেশিদের জমা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৫৫ শতাংশ, এমনটাই জানা গেছে। কিন্তু এটা অনেকের নিকট প্রশ্ন বাংলাদেশ সরকার কেন এই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে না। বাংলাদেশ সরকার ওই ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য চায়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাটালি চুয়ার্ড।
তিনি বলেন, “সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের টাকা জমা রয়েছে। এই অর্থের বেশির ভাগই অবৈধভাবে অর্জিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এখনো এ বিষয়ে সুইস ব্যাংকের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য চায়নি।”
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিক্যাব) সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আয়োজিত এই আলোচনায় নাতালি চুয়ার্ড বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বিনিয়োগ, মিয়ানমার থেকে আগত শরনার্থীদের সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সেখানে উঠে আসে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা জমার প্রসঙ্গ।
নাতালি বলেন, চলতি বছরের জুন মাসে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা রেখেছেন। কারা এই টাকা রেখেছে তা খুঁজে বের করার উপায় আছে। চুয়ার্ড বলেন, “এই তথ্য পেতে কী করতে হবে সে বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছি। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য অনুরোধ করা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে এ ধরনের তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব। এভাবেই আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছি।”
অনেকেই অভিযোগ করেন, কালো টাকা রাখার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হচ্ছে সুইস ব্যাংক। যদিও নাতালি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের ব্যাংকগুলো অবৈধ টাকা রাখার নিরাপদ জায়গা নয়। সেসব ব্যাংক দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে প্রায় ১০ শতাংশ অবদান রাখে। এখন এসব ব্যাংক বিভিন্ন নীতি সংস্কার করেছে, নতুন ও উন্নত মান তৈরি করেছে।” তবে এসব ব্যাংক অবৈধ টাকা রাখতে প্রলুব্ধ করে তা সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরও দাবি করেন, “সেই ব্যাংকে বাংলাদেশিরা কত টাকা জমা রেখেছেন তার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ওই টাকা অবৈধ উপায়ে অর্জিত হয়েছে কিনা তা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।”
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা বাংলাদেশি মুদ্রা জমা ছিল। ২০২১ সালে এই টাকার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এক বছরে এই পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ।
তবে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে এই সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো ধরনের তথ্য পায়নি, এমনটাই বলছে কিছু কর্মকর্তা। ব্যাংকটিতে কারা এই বিপুল পরিমান অর্থ জমা রাখছে তাও জানা যায়নি। তবে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কখনই তাদের আমানতকারীদের কোনো তথ্য প্রকাশ করে না।