চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি তাদের স্বজনদের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার পর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের সহায়তা সেলের পাশে বুথ স্থাপন করে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তাই নিজের বাবাকে সনাক্ত করতে হাসপাতালের সামনে হাজির ৬ মাস বয়সী একটি সন্তান। তার বাবা বাঁশখালীর শেখেরখিল গ্রামের বাসিন্দা। নাম আব্দুস সোবহান। তিনি সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শনিবার রাতে আগুন লাগলে ইমো ভিডিও কলে স্ত্রীকে আগুন দেখান। তারপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। রোববার দিনভর খোঁজাখুঁজির পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (সিএমসি) হাসপাতালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তবে আরেক পরিবার এসে দাবি করে লাশটি তাদের আত্মীয়ের। এ কারণে আবদুস সোবহানের ৬ মাস বয়সী শি/ শুর লাশ শনাক্ত করতে এখন ডিএনএন নমুনার অপেক্ষায় রয়েছে।
বেবী ফাইজার তার মা উম্মে কুলসুম ও এক চাচার সাথে চমেক হাসপাতালে আছেন।
সোমবার সকালে ফয়জার রহমানের মামা (কুলসুমের ভাই) এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আগুন লাগার পর তারা ভিডিও কলে কথা বলছিলেন। তারপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর থেকে আবদুস সোবহান নিখোঁজ ছিলেন। চমেক হাসপাতালসহ আশেপাশের সব হাসপাতালে তল্লাশি চালানো হয়েছে। চমেকের মর্গে একটি লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আরেকজন এসে দাবি করলেন। সেজন্য আমি ডিএনএর জন্য অপেক্ষা করছি।
এ সময় কুলসুম বলেন, সোবহানের সঙ্গে শেষ কথা হয় শনিবার রাতে। সে বলল তাহলে আমার সব স্বপ্ন শেষ।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাদের পরিচয় জানা যায়নি তাদের স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ সোমবার (৬ জুন)। এরপর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ডিএনএ সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যে বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের হেল্প সেলের পাশে বুথটি স্থাপন করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান জানান, নিহতদের মধ্যে ২১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত ১২ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অনেক লাশ শনাক্ত করা যায়নি। তাই নিহতদের ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
এদিকে আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করছে। ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন, র্যাব, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপিসহ বিভিন্ন স্থানীয় সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা যৌথভাবে কাজ করছেন।
এই পর্যন্ত পওয়া, অগ্নিকাণ্ড ও ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ৪৬। দগ্ধ ও আহত ১৬৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতে শনাক্ত হওয়া নিহতদের পরিবারের কাছে টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। আর যাদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি তাদের ডিএনএ পরিক্ষা চলছে।