প্রথম পর্যায়ে এই রাসায়নিক পদার্থের ভ’য়াবহতায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সে সময় মালিকপক্ষ ঘটনাস্থলে যায়নি এবং কন্টেইনার ডিপোতে কী ধরনের রাসায়নিক ছিল সেটা কাউকে জানায়নি । ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পরছিলো না উদ্ধারকারীরা। এ ঘটনা সম্পর্কে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের বিএনপির সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে আগুন দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড।
তিনি ডিপো মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। ঘটনাটি দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে নাশকতা রয়েছে বলে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্য সৈয়দ আবু বাবলা। সোমবার (৮ জুন) জাতীয় সংসদের পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে রুমিন ফারহানা ও আবু হোসেন বাবলা এ মন্তব্য করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, সীতাকুণ্ডের ঘটনা দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। চট্টগ্রাম বিস্ফোরক অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডিপোতে দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি সম্পর্কে তাদের জানানো হয়নি। এ ধরনের পণ্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ধরনের অবকাঠামোর প্রয়োজন হলেও ওই ডিপোতে তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফায়ার সার্ভিস আরও জানায়, ডিপো মালিকদের কেউই ডিপোতে কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের অভিযোগ করেননি। সেটা জানলে আগুন নেভানোর জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকত। এতে বিস্ফোরণের ঝুঁকি কমে যেত। এতে অগ্নিনির্বাপক কর্মীর মৃত্যু হয়তো ঘটেনি। কনটেইনার ডিপো মালিকের চরম উদাসীনতায় এসব প্রাণ হারিয়েছে।
তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মজিবুর রহমান। সরকারি দলের এমন অবস্থান থেকে তিনি কোনো নিয়ম-নীতি মানার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিনি বিনা অনুমতিতে ডিপো স্থাপন করেন, বিনা অনুমতিতে ডিপোতে রাসায়নিক দ্রব্য রাখেন এবং অগ্নিকাণ্ডের সময় রাসায়নিকের বিষয়ে দমকল কর্মীদের অবহিত করেননি। এই খুঁটির শক্তি তিনি কোথায় পেলেন? এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হওয়ায় তিনি এই স্তম্ভ পেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের এমন অবস্থান থেকে তিনি বোধহয় কোনো নিয়ম-নীতি মানার প্রয়োজন বোধ করেননি।
এর আগে ২০১২ সালে আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হয়। ওই ঘটনার প্রধান আসামি তাজরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন। এই মামলার ১০ বছর হয়ে গেছে এবং এখনও কোনও সমাধান পাওয়া যায়নি। বিপরীতে দেলোয়ার হোসেনকে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি করা হয়েছে। দুই দিন অতিবাহিত হলেও বিএম কন্টেইনার ডিপোর মালিকের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে আইন লঙ্ঘন করে বিশেষ কোনো অবকাঠামো ছাড়াই হাইড্রোজেন পারক্সাইডের মতো দাহ্য পদার্থ ডিপোতে মজুত করে রেখেছেন তিনি। আমি আপনার (স্পীকার) মাধ্যমে অনুরোধ করব অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
রুমিন ফারহানা আরও জানান, ২০১০ সালের এই দিনে রাজধানীর নিমতলীতে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যেখানে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে কোনো মামলা হয়নি। একটি জিডি হয়েছে যার তদন্ত এখনও চলছে। নিমতলীর ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, কোনো মামলা হয়নি। ফলে চুড়িহাট্টায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। এ দুটি ঘটনার একমাত্র কারণ রাসায়নিক গুদাম। সরকার বলেছে রাসায়নিক গুদাম সরানো হবে। কিন্তু পুরান ঢাকা থেকে এখনো গুদামটি সরানো হয়নি। বারুদের নামে রয়েছে ১৫ হাজার রাসায়নিক গুদাম ও দোকান। এতে মানুষ বসবাস করছে।
পয়েন্ট অব অর্ডারে একই বিষয়ে বক্তব্য দেন বিরোধী দলীয় নেতা সৈয়দ আবু বাবলা।
তিনি বলেন, আমরা কি সীতাকুণ্ডের নির্মম ও ভয়াবহ ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে সান্ত্বনা নেব? নাকি এর পেছনে কোনো নাশকতা আছে? আশা করি সরকার তদন্ত করে বের করবে। যদিও এসব ঘটনার তদন্তে আমরা দিনের আলো দেখিনি। এই দুর্ঘটনার পর নানা প্রশ্ন উঠছে। টেলিভিশনের টকশোতে সরকারের সব বক্তব্যই ইতিবাচক আর বিরোধী দলের বক্তব্য নেতিবাচক দেখছি।
একটি জনবহুল এলাকায় একটি ডিপোতে রাসায়নিক কিভাবে রাখা হয় তা জানতে চান। আমরা ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট দেই কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি আনতে পারছি না কেন? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প সম্পন্ন হলে বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। বিশ্ব মিডিয়া আমাদের প্রশংসা করছে খবর। কিন্তু উল্টো এই আগুনে নির্দয়ভাবে মরতে হবে বলে লজ্জা কোথায় রাখব? অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা গেলে সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির গল্পটি ইতিবাচকভাবে বিশ্বের সামনে আসত। কিন্তু তা হয়নি। সরকারকে বলে রাখা ভালো যে দেশে উন্নয়ন প্রকল্প করছে কিন্তু দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমরা যোজন যোজন থেকে অনেক দূরে সেটা সীতাকুণ্ডে সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুরো দেশ শোকে কাতর। মৃ/ ত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এই পর্যন্ত প্রায় ৪৯ জনের প্রনায়নের খবর পাওয়া গেছে। আহত পাঁচ শতাধিক। অনেকেই এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ। প্রিয়জনের খোঁজে চট্টগ্রাম মেডিকেল মর্গে ভিড় করছেন অনেকে। আগুন লাগার ৫০ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও তা এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।