গত শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সেটায় প্রয়াত হয়েছেন অর্ধশতাধিকেরও বেশি মানুষ এবং আহত হয়েছেন পাঁচ’শোরও বেশি। অনেকেই এই কেয়ামতসম ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে রয়েছেন। তাদের বর্ণনায় উঠে এসেছে, সেই রাতের ভ”য়া/বহতার চিত্র যা বলতে গিয়ে অনেকেই থেমে থেমে যাচ্ছিলেন, কন্ঠ প্রকম্পিত হচ্ছিলো।
সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকার মানুষ অন্য দিনের মতো রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঘড়ির কাঁটা ঠিক ১১টা বাজে। এ সময় বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিকট বি’/স্ফো’রণ হয়। বি’/স্ফো’রণে কয়েক কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। এরপর দগ্ধ লোকজন পুরো এলাকায় ছুটে আসে। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ এলাকার পরিবেশ। সেই ভ”য়ানক রাতের কথা প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, যাকে তারা কেয়ামতের সাথে তুলনা করেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা ৫৬ বছর বয়সী মতিউর রহমান গতকাল দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। বর্নণা করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে তিনি কথা বলতে পারতেন না। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনে এমন ভ”য়/ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী হইনি। বি”স্ফো/রণের পর মানুষের হাত-পা ও মস্তিষ্ক কয়েকশ মিটার দূরে পড়ে যায়। এমনকি ৪০ থেকে ৫০ কেজি ওজনের ভা”ঙা টুকরো মানুষের বাড়িতে গিয়ে পড়ে। সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে আজও শরীর কেঁপে ওঠে। মাথা থেকে সেসব দৃশ্য সরাতে পারছি না।’
ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেশবপুর এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বলেন, রাতে ভাত খেয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এ সময় বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে যায়। তখন আমি আ”ত/ঙ্কিত হয়ে আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই।’
বিএম কন্টেইনার ডিপো সংলগ্ন আমিনুর রহমানের বাড়ির বাসিন্দা মোঃ হোসেন ভুট্টো। তাঁর কথায়, ‘‘ডিপোতে আগুন লাগার খবর পেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ ডিপোতে বিকট বি”স্ফো/রণ হয়। তখন মনে হচ্ছিল ১০ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। পুরো বিল্ডিং আমার গায়ের ওপর পড়ে গেছে। বিএম ডিপোর কাছে আলাউদ্দিনের বাড়ির সালেহা বেগম বলেন, ‘বি’স্ফো/রণের পর সবাই ছুটতে থাকে। কেউ কেউ যন্ত্রণায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিলেন। অগ্নিদ/’গ্ধদের মধ্যে কয়েকজন আবার পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তখন মনে হলো আমি কেয়ামতের সাক্ষী হচ্ছি।’
কামালের বাড়িতে ঠিকাদার মো. সেলিম বলেন, “বি’/স্ফো’রণের পরপরই বাসা থেকে বের হয়ে দগ্ধ মানুষের আ”র্তচি/ৎকার দেখেছি। দগ্ধদের সবার শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা। অনেকের হাত নেই, পা নেই। তারপরও তারা দৌড়ে ছুটছে। জীবন বাঁচান। কী ভ”য়া/নক পরিবেশ ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এমন প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি আমি আর হতে চাই না।’
বিএম কন্টেইনার ডিপো সিএফএস সুপারভাইজার এমরান হোসেন বলেন, “রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডিপোর অ্যালার্ম বেজে ওঠে। মনে করেছি অন্য দিনের মতো স্বাভাবিক কিছু। তবে রাত ১১টার পর একের পর এক বি”স্ফো/রণ ঘটতে থাকে। সে সময় কোনো নিরাপত্তা সারন্জম কাজে আসছিল না। আমরা একটি বিপর্যয়কর রাত কাটিয়েছি। আমি আমার জীবনে এমন দৃশ্য দেখিনি।’
উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ডের ঘটনায় প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে গঠনকৃত তদন্ত কমিটি। এই ঘটনায় নাশকতার কোন বিষয় জড়িত কিনা সে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কন্টেইনারে অতিমাত্রায় দাহ্য কোন পদার্থ ছিল যেটা সামান্য তাপে আগুন ধরে যায়। এর পরেই একের পরে বি’/স্ফোরণ ঘটতে শুরু করে।