Tuesday , December 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / শেষ পর্যন্ত সীতাকুন্ডের অগ্নিকান্ডের ঘটনার পেছনের কারন সামনে আনলেন বিশেষজ্ঞরা

শেষ পর্যন্ত সীতাকুন্ডের অগ্নিকান্ডের ঘটনার পেছনের কারন সামনে আনলেন বিশেষজ্ঞরা

গত শনিবার রাত ৯ টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৪ জনসহ এবং ৯ জন দমকলকর্মীর সদস্য প্রয়াত হয়েছেন। এ ধরনের ভ/’য়াব”হ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পিছনের মূল কারণ বের করার চেষ্টা করছেন ফা”য়ার সেফটি বিশেষজ্ঞগণসহ গঠিত তদন্ত কমিটি। তারা ইতিমধ্যে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের প্রাথমিক কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন রাজশাহীর তথ্য সম্পর্কে গোপনীয়তার কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

কারখানা পরিদর্শন বিভাগ বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিনির্বাপণ সমস্যা সহ ১০টি ত্রুটি চিহ্নিত করেছে। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ডের শীতলপুরের বিএম কনটেইনার ডিপোতে নিবন্ধিত ডাকযোগে চিঠি পাঠায় কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর। চিঠিতে বলা হয়েছে, ১০ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে। তবে চার মাস পেরিয়ে গেলেও সাড়া দেয়নি ডিপো কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে তথ্য গোপনের কারণেই আগুন লেগেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। প্রকৃত তথ্য না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের নয়জন সদস্য প্রয়াত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ফা”য়ার বিশেষজ্ঞরা।

বিএম ডিপোতে পাঠানো ওই চিঠি গতকাল কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-মহাপরিদর্শক সাকিব মোবারকের কাছে চাওয়া হয়। বিএম কন্টেইনার ডিপো তাদের চিঠির জবাব দেয়নি বলে দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে তিনি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বি’স্ফো/’রক অধিদফতরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেছিলেন, ডিপোতে রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থ রাখার কোনো অনুমতি নেই। তিনি বলেন, দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ বা সংরক্ষণের নিয়ম না মানার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। প্রথমে আমরা জানতে পারি যে, ডিপোতে রাসায়নিক রয়েছে। প্রতিটি ড্রিলের ১৫ দিন আগে কারখানা পরিদর্শন বিভাগকে জানানো হয়। পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা মহড়ায় থাকেন। এ ছাড়া শর্ত হিসেবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা কারখানার কমপক্ষে ১৮ শতাংশ শ্রমিক বা কর্মচারীকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে অগ্নিনির্বাপণের জন্য বিশেষ সার্টিফিকেট কোর্স দিতে হবে। তবে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে, ১৬ শতাংশ কর্মী অগ্নিনির্বাপণে প্রশিক্ষিত ছিলেন না। ডিপোতে শর্ত অনুযায়ী যথাযথ অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না।

ফায়ার সেফটি বিশেষজ্ঞ সেলিম নেওয়াজ ভূঁইয়া গনামাধ্যমকে বলেন, তথ্য গোপনের কারণেই আগুন এত ভ’য়া’/বহ। কারণ হাইড্রোজেন পারক্সাইড নিজেই দাহ্য নয়। অবশ্যই, মজুদের মধ্যে ERG (মি’থাইল, ই”থাইল এবং ক্যান্টন) বা অ্যাসিটোন ছিল।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশিকা রয়েছে। নির্দেশিকা অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিকভাবে, মনে হচ্ছে বিএম ডিপোতে নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ করা হয়নি। এছাড়া আগুন লাগার পর রাসায়নিকের বিষয়ে ফা”য়ার সার্ভিসকে কিছু জানানো হয়নি। ফলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। কর্তৃপক্ষ যদি শুরুতেই যথেষ্ট তথ্য দিতেন তাহলে পরিস্থিতি এতটা ভ”য়া/বহ হতো না। ‘

জানা গেছে, বিএম কন্টেইনার ডিপোর অধিভুক্ত আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক তৈরি করে। সোডিয়াম সালফেট, সরবিটল, কস্টিক সোডা প্রিলস এর মধ্যে কয়েকটি। এই রাসায়নিক তৈরির কাঁচামাল ডিপোতে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া উৎপাদিত রাসায়নিক রপ্তানির জন্য কন্টেইনার ডিপোতেও রাখা হয়। বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ মজুদ থাকলেও তা ফায়ার সার্ভিস বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থাকে জানানো হয়নি। তাই দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত কোম্পানিগুলো কন্টেইনার ডিপোতে রাসায়নিক মজুদ নিয়ে অন্ধকারে ছিল। বিএম কন্টেইনার ডিপোটি ২০১১ সালে বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডসের দুটি কোম্পানির ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চালু হয়েছিল। বাংলাদেশ স্মার্ট গ্রুপ এই যৌথ উদ্যোগ ডিপোর অংশীদার। ডিপো আমদানি ও রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত কন্টেইনারগুলি পরিচালনা করে এবং খালি পাত্রগুলি সংরক্ষণ করে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নামক রাসায়নিক থেকে যে বি’/স্ফো”রণটি হয়েছিল সেটিও স্মার্ট গ্রুপের আরেকটি কোম্পানি আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ডিপোতে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কারণ আমরা তখন জানতাম না যে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের বিশাল মজুদ রয়েছে। আমরা যদি প্রথম দিকে রাসায়নিকের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতাম তবে আমি অন্যভাবে এগিয়ে যেতাম। আমি আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। আমি ফোম ব্যবহার করতে পারতাম। এতে আমাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমে যেত। ডিপোতে কয়টি রাসায়নিক কনটেইনার ছিল জানতে চাইলে আনিসুর বলেন, ‘ডিপোর মালিক এখনো কনটেইনারের সংখ্যা বিষয়ে নিশ্চিত করেননি। কখনও ২৮, কখনও ৩০। আমি তাদের কেমিক্যালের পাত্রগুলো সরাতে বলেছি। এখন না জেনে ফা/’য়ার ফাইটিংয়ে গেলে কন্টেইনারের ভেতরে কোনো দাহ্য বস্তু থাকলে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর দুর্ঘটনা এড়াতে কেমিক্যালের কন্টেইনার সরিয়ে ডিপোর অন্য অংশে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মালিক বলছেন তারা চেষ্টা করছেন। তবে এটি অপসারণ করা ঝুঁকিপূর্ণ, এটি দ্রুত করা সম্ভব নয়।’

তবে এই ধরনের ভ/’য়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিভাগকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সীতাকুন্ড অগ্নিকাণ্ডে যে ধরনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়। ভবিষ্যতে আর যাতে না ঘটে সেই দাবি গণমানুষের এই বিষয়ে সরকারের গুরুত্ব সহকারে কাজ করা উচিত বলে মনে করেন তারা।

About bisso Jit

Check Also

ভারতের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ফাঁস, বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন শেখ হাসিনা

ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *