বর সেজে কনের বাড়িতে স্বজনদের নিয়ে একটি প্রাইভেট কারের রওনা করেন বর। কনের পরিবার বর আসার অপেক্ষায়। অন্যদিকে বরের পরিবার অপেক্ষা করছে কখন তার ছেলে পুত্রবধূকে নিয়ে ঘরে ফিরবে। দুই পরিবারেরই উৎসবমুখর পরিবেশ। হঠাৎই একটি দুঃসংবাদ কানে পৌঁছায় স্বজনদের। জানতে পারে তাদের গাড়ির উপর ভেঙে পড়েছে গার্ডার এবং প্রয়াত হয়েছেন পাঁচ জন।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরার জসিমউদ্দিন মোড় সংলগ্ন সড়কে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পের একটি গার্ডার একটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে যায়। এতে পাঁচ যাত্রী নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও দুই যাত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রকল্পের কাজ চলাকালীন একটি ক্রেন দিয়ে গার্ডারগুলো তোলা হচ্ছিল। হঠাৎ ক্রেনটি গার্ডারের দিকে কাত হয়ে একটি পাশ দিয়ে যাওয়া প্রাইভেট কারের উপর পড়ে। এতে প্রাইভেটকারটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
প্রাইভেটকারে সাতজন ছিলেন। সেখানে সদ্য বিবাহিত হৃদিয়ার বাবা রুবেল (৬০), হৃদিয়ার শাশুড়ি ফাহিমা (৪০), কনে রিয়া মনিরের খালা ঝর্ণা (২৮), ঝর্ণার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। শুধু হৃদিয়া আর রিয়া বেঁচে আছে।
ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাইভেটকার থেকে গার্ডকে সরিয়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তারা লিভার দিয়ে এটি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কাজ না হওয়ায় সাড়ে ৬টার দিকে একটি এক্সকাভেটর আনা হয়। এটি টিল্টিং ক্রেনকে সোজা করে এবং প্রাইভেট কার থেকে গার্ডারটি সরিয়ে দেয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বজনরা জানান, শুক্রবার হৃদয় ও রিয়া বিয়ে করেন। সোমবার তারা ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুর বাগানের আসরাফুদ্দিন চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায়।
এত ভারি একটি কংক্রিট প্রাইভেট কারের উপর পড়ায় সহজেই সেটিকে সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। দীর্ঘ সময় চেষ্টার পরে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে স্পেশাল যন্ত্র নিয়ে এসে গান আরতি সরিয়ে নেন তারা। তার আগেই বেঁচে যাওয়া এক নব দম্পতিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় তারা। বেঁচে যাওয়া ঐ নবদম্পতি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।